Kabul

Kabul: তাঁদের রায়ে হয়েছিল জেল, এখন মুক্ত সেই সব জঙ্গি, ভয়ে কাঁটা কাবুলের মহিলা আইনজীবীরা

গত কয়েক সপ্তাহে এই মহিলা বিচারকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বিচারক সেই সুযোগ পাননি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৯
Share:

তালিবান জমানায় নারীশিক্ষার অধিকার চেয়ে বিক্ষোভ। শুক্রবার কাবুলের প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে। ছবি রয়টার্স।

এক সময়ে তাঁদের রায়েই কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় এসে জেল থেকে বার করে এনেছে সেই সব সাজাপ্রাপ্ত দাগী অপরাধীকে। তাদের অনেকেই জঙ্গি। এই অবস্থায় তালিবান-অধিকৃত আফগানিস্তানে প্রাণভয়ে রয়েছেন অন্তত ২৫০ মহিলা বিচারক।

Advertisement

গত কয়েক সপ্তাহে এই মহিলা বিচারকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বিচারক সেই সুযোগ পাননি। তাঁরা আফগানিস্তানেই রয়েছেন। চেষ্টা করছেন যদি কোনও ভাবে তালিবানের চোখে ধুলো দিয়ে দেশ থেকে পালাতে পারেন।

২০ বছর আগে আফগানিস্তান যখন তালিবানের দখলে ছিল, মেয়েদের যাবতীয় অধিকার খর্ব করেছিল সংগঠনটি। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার ছিল না। বাইরে কাজ করার অনুমতি ছিল না। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পা ফেলা বারণ ছিল তাঁদের। ছিল আরও বহু বহু নিষেধাজ্ঞা। ফলে গত মাসে তালিবান ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আতঙ্কে মহিলারা।

Advertisement

তালিবান যদিও বলছে, তারা আর আগের মতো নেই। মেয়েদের অধিকার দেওয়া হবে, তবে শরিয়ত মেনে। ফলে আদৌ ঠিক কতটা ছাড় মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান মেয়েরা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় ভয়েরই আভাস পাচ্ছেন তাঁরা। হিজাব না-পরার জন্য এক মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দিন কয়েক আগে। চুরির অভিযোগে এক যুবকের মুখে কালি লেপে তাঁকে ট্রাকের পিছনে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্র, পুরুষদের সঙ্গে মেয়েদের মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান। এতে সকলেরই দৃঢ় বিশ্বাস, ফের ২০০০ সাল পূর্ববর্তী জমানাতেই ফিরছে আফগানিস্তান। মহিলা বিচারকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা প্রবল আতঙ্কে, না জানি তাঁদের জন্য কোন তালিবানি-রায় অপেক্ষা করে রয়েছে! উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের দুই মহিলা বিচারপতিকে গুলি করে খুন করেছিল তালিবান।

আফগানিস্তানের এক শীর্ষস্থানীয় মহিলা বিচারক ইতিমধ্যেই ইউরোপে পালিয়ে গিয়েছেন। একটি গোপন স্থান থেকে জানান, তালিবান দেশ জুড়ে সমস্ত বন্দিকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। মহিলা বিচারকেরা সত্যি প্রাণসংশয়ে রয়েছেন। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘চার-পাঁচ জন তালিবান জঙ্গি লোকজনের বাড়ি গিয়ে আমার খোঁজ করছিল। জানতে চাইছিল, আমি কোথায়? এই লোকগুলোকেই আমি কারাদণ্ড দিয়েছিলাম।’’

কিছু মানবাধিকার কর্মী ও বিদেশি সহকর্মীদের সাহায্যে কোনও মতে দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হন এই বিচারক। ইউরোপে পালিয়ে গেলেও দেশে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। বললেন, ‘‘ওঁরা ভীষণ ভয় পেয়ে রয়েছেন। ওঁরা নিশ্চিত, আফগানিস্তান থেকে ওঁদের উদ্ধার করা না-হলে তালিবান মেরে ফেলবে।’’ তিনি জানান, শুধু মহিলা বিচারকরা নন, মহিলা আইনজীবী, মহিলা পুলিশ, সকলেই প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জেল থেকে বেরোনো

বন্দিরা সরাসরি হুমকি দিয়েছে, ‘আমাদের নজর এড়িয়ে কেউ পালাতে পারবে না’।

ব্রিটেনের আইনমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড জানিয়েছেন, ৯ জন মহিলা বিচারককে উদ্ধার করে লন্ডনে আনা হয়েছে। প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে, এ রকম আরও অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। বাকল্যান্ড বলেন, ‘‘ওই বিচারকেরা আইন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। তালিবানের ক্ষমতাবৃদ্ধিতে ওঁরা তো ভয় পাবেনই।’’ কাবুল পতনের পরে যে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বহু আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীকেই উদ্ধার করতে পারেনি পশ্চিমের দেশগুলো। তা ছাড়া, বিদেশি শক্তিগুলো সকলেই নিজের নিজের দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করার বিষয়ে জোর দিয়েছিল। এক আমেরিকান বিচারক বলেন, ‘‘সকলের এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। হাতে গোনা কিছু লোক উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন। ভীষণ রাগ হচ্ছে। এমনটা তো হওয়ার নয়।’’

ইতিমধ্যে তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে ‘বিয়েকে’ অস্ত্র করে পালানোর চেষ্টা করছেন বহু আফগান মহিলা। শোনা যাচ্ছে, যে সব পরিবারের আর্থিক জোর রয়েছে, তাঁরা হাজার হাজার ডলার দিয়ে বিদেশি নাগরিকত্ব থাকা পাত্র ‘কিনছেন’। এ খবর আমেরিকার গোচরে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও জানিয়েছে, তারা এমন কিছু ঘটনা পেয়েছে। ওই দেশের আশ্রয় শিবিরে থাকা কিছু মেয়ে স্বীকার করেছে, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন বাবা-মা। উদ্দেশ্য একটাই, মেয়েকে তালিবানের হাত থেকে রক্ষা করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন