বিমান বিপর্যয় পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই!
গত বছর মার্চ মাসে কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে উধাও হয়ে যায় মালয়েশীয় বিমান এম এইচ ৩৭০। সেই জটের সমাধান হওয়ার আগেই আজ ফের বিমান দুর্ঘটনা। পাপুয়ার প্রাদেশিক রাজধানী জায়াপুরা থেকে অক্সিবিল যাওয়ার পথে আজ দুপুরে হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইন্দোনেশিয়ার ট্রিগানা এয়ারের এ টি আর ৪২-৩০০ টার্বোপ্রপের। ৫৪ জন আরোহী-সহ সেই বিমানটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না প্রথমে। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরে, ট্রিগানা এয়ার কর্তৃপক্ষ জানান, পাপুয়ার অক বেপ জেলার গ্রামবাসীদের দাবি, বিনতাং পাহাড়ে ভেঙে পড়েছে বিমানটি।
মালয়েশীয় বিমান এম এইচ ৩৭০ দিয়ে শুরু। তার পর কখনও গুলি করে বিমান নামিয়েছে জঙ্গিরা। কখনও খারাপ আবহাওয়ার ফলে জাভা সাগরে ভেঙে পড়েছে যাত্রিবাহী বিমান। আবার কখনও কো-পাইলট ১৫০ জন আরোহী-সহ বিমান নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন আল্পস পর্বতের দুর্গম এলাকায়। লাগাতার বিমান বিপর্যয়ের সেই তালিকায় এ বার নাম জুড়ল ট্রিগানা এয়ারের এ টি আর ৪২-৩০০ টার্বোপ্রপের।
ইন্দোনেশিয়ার তদন্তকারী সংস্থা দ্য ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি জানিয়েছে, জায়াপুরার বিমানবন্দর সেন্তানি থেকে আজ স্থানীয় সময়ে দুপুর ২টো ২১-এ অক্সিবিলের উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। পাঁচ শিশু-সহ মোট ৪৯ জন যাত্রী এবং পাঁচ জন বিমানকর্মী ছিলেন সেই বিমানে। কিন্তু অক্সিবিলে নামার কিছু আগেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে তার সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘড়িতে তখন দুপুর ৩টে বা়জতে পাঁচ মিনিট বাকি। ট্রিগানা এয়ারের ডিরেক্টর বেনি সুমারিন্তো জানিয়েছেন, ওই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা আর একটি এ টি আর ৪২ পাঠিয়েছিলেন। আগের বিমানটির পথ অনুসরণ করেই যায় দ্বিতীয় বিমানটি। তবে সুরাহা কিছুই হয়নি। খোঁজ মেলেনি হারিয়ে যাওয়া বিমানের। বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে। দ্য ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির মতে, খারাপ আবহাওয়া আর অন্ধকার নেমে আসার ফলে সন্ধান চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা।
কিন্তু তার আগেই রহস্যের কিনারা হয়ে গেল। অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন ট্রিগানা এয়ার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, পাপুয়ার অক বেপ জেলার গ্রামবাসীদের থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী সেখানেই বিনতাং পাহাড়ে ভেঙে পড়েছে বিমানটি। এমনকী, গ্রামবাসীরা সেই বিমানের ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পেয়েছেন বলে শোনা গিয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল? কেনই বা কোনও বিপদ বার্তা পাঠানো হয়নি বিমানটি থেকে? প্রশ্নগুলো আপাতত অমীমাংসিতই রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ দফতরের মুখপাত্র জুলিয়াস বারাতা বলেছেন, ‘‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু ট্রিগানা এয়ারের। কিন্তু তার পর থেকে বিপদ যেন কিছুতেই ছাড়ছে না তাকে। এখনও পর্যন্ত এই সংস্থার ১৪টি বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই সংস্থার বিমান আদৌ সুরক্ষিত নয়, এমনটাই মনে করে ইউরোপীয় কমিশন। তাই ইউরোপীয় আকাশে ট্রিগানা এয়ারের বিমান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
রাতের অন্ধকার আর কুয়াশা পেরিয়ে সন্ধান চালানো এখন সম্ভব নয়। তাই গ্রামবাসীদের কথার সত্যতা যাচাই করতে সোমবার সকাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রিগানা এয়ার কর্তৃপক্ষ। সে কারণেই সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা নিয়েও এখনও পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি। যদিও, যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা যে প্রায় ক্ষীণ, সে বার্তাও সব মহল থেকে পেয়ে গিয়েছেন তাঁদের আত্মীয়রা। তবুও অলৌকিকের আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা।