দুবাইয়ে অনাবাসী ভারতীদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। রবিবার। পিটিআই।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাজধানীতে এই প্রথম তৈরি হতে যাচ্ছে কোনও হিন্দু মন্দির। মন্দির বানাচ্ছে মোদীর রাজ্য গুজরাতেরই একটি হিন্দু প্রতিষ্ঠান। আবু ধাবিতে সেই মন্দিরের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পশ্চিম এশিয়ার তিন দেশে চার দিনের সফরে শনিবারই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সকালে দুবাইয়ের অপেরা হাউস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্দিরের শিলান্যাস করেন তিনি। মন্দির তৈরির মূল দায়িত্বে থাকবেন ভারতীয় শিল্পীরা। ২০২০ সালের মধ্যে এটি তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র হিন্দু মন্দির রয়েছে। সেটি দুবাইয়ে। মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই আবু ধাবিতে মন্দির গড়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরে যান মোদী। তার পরই সে দেশের সরকার ঘোষণা করে, তারা হিন্দু মন্দির গড়ার জন্য ৫৫ হাজার বর্গ মিটার জমি বরাদ্দ করছে আবু ধাবির আল ওয়াথবা-য়।
এই মুহূর্তে সে দেশে প্রায় ৩০ লক্ষ ভারতীয় বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত রয়েছেন, যা সেখানকার জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরও বেশি। এঁদের একটা বড় অংশ হিন্দু।
মন্দিরটি তৈরি করবে শতাব্দী প্রাচীন হিন্দু প্রতিষ্ঠান বোচাসন্ন্যাসী শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থা। এটির সদর দফতর গুজরাতের অমদাবাদে।
আরও পড়ুন: স্বাধীন প্যলেস্তাইন দেখতে চায় ভারত, রামাল্লায় মোদী
এ দিন মন্দিরের শিলান্যাসের পর ১৮০০ অনাবাসী ভারতীয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তৃতায় নোট বাতিল ও জিএসটি-র প্রশংসা করতে গিয়ে বিরোধীদেরও খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘গত সাত বছর ধরে জিএসটি আটকে ছিল। আজ, তা বাস্তব।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গরিব মানুষরাও জানিয়েছেন, নোট বাতিল সঠিক পদক্ষেপ। যদিও কিছু মানুষের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। তাই তারা এখনও শোক পালন করছে।’’
আরও পড়ুন: প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ডোভাল কি ডোবালেন
শনিবার আবু ধাবির প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে সেখানকার যুবরাজ এবং সে দেশের শীর্ষপদস্থ সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। দু’দেশের মধ্যে কয়েক দফা চুক্তিও হয়। ওএনজিসি-র নেতৃত্বে ভারতীয় তেল সংস্থাগুলির একটি কনসোর্টিয়াম সে দেশের আবু ধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি)-র সঙ্গে শনিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ মউ স্বাক্ষর করেছে। এডিএনওসি-র একটি তৈলক্ষেত্রের ১০ শতাংশ শেয়ার কিনছে ভারতীয় কনসোর্টিয়ামটি। আগামী ৪০ বছরের জন্য এই চুক্তি কার্যকর থাকবে।
মন্দির শিলান্যাসের পাশাপাশি তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন রশিদ আল মাক্তুমের সঙ্গে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং জনসংযোগ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন মোদী। কথা হয়েছে বিভিন্ন বড় মাপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সম্পর্ক শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার নয়। তার থেকেও অনেক বেশি।
দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট-এ মোদী বলেছেন, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা তৈরিতে যে পরিমাণ সময়, সম্পদ এবং অর্থব্যয় হচ্ছে তা উদ্বেগের। প্রযুক্তিকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা উচিত, ধ্বংসের জন্য নয়।’’ দুবাইয়ের প্রযুক্তির প্রশংসা করে তিনি বলেন মরুশহরটি যে ভাবে পাল্টে গিয়েছে, সেটা মির্যাকল ছাড়া কিছু নয়। তবে সাইবার দুনিয়ার সাহায্য নিয়ে জঙ্গি-মানসিকতা ছড়ানো সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি।
মোদী এ দিন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইদুয়া ফিলিপের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরের মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ প্রথমবার ভারতে আসবেন। সেই সফরের বিষয় নিয়েই দু’জনের কথা হয়েছে।
এ বারের ত্রিদেশীয় সফর প্যালেস্তাইন থেকে শুরু করেন মোদী। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হয়ে যাবেন ওমানে। সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।