কারও অবাঞ্ছিত সন্তান। কারও আবার সন্তান পালনের সামর্থ নেই। এত দিন সেই সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে আসছিল সরকার। তবে এ বার সেই গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে রাশিয়ায়। এই বিষয়টি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি উঠেছে পার্লামেন্টে।
২০১১ সালে রাশিয়ায় চালু হয়েছিল ‘বেবি বক্স’। সরকারি হাসপাতালের মাতৃত্বকালীন বিভাগে রাখা থাকে ওই বাক্স। কোনও মা চাইলে চুপিসাড়ে সেখানে রেখে যান তাঁর নবজাতককে। রাশিয়ায় এমন ২০টি বাক্স আছে। তবে এ বার রাশিয়ায় সেই ‘বেবি বক্স’ নিষিদ্ধ করার ভাবনায় উঠেছে বিতর্কের ঝড়।
সেনেটর ইলেনা মিজউলিনার বেবি বক্স নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে রুশ সরকার। যদিও পার্লামেন্টে ওই প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে বিতর্ক বাকি। তবে সেনেটরের সুপারিশ অনুযায়ী, এই বেবি বক্স এক বার নিষিদ্ধ হয়ে গেলে কোনও সংস্থা বেআইনি ভাবে এমন কোনও বাক্স ইনস্টল করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়বে। বাক্স পিছু ৫০ লক্ষ রুবল জরিমানাও হবে।
শুধু বেবি বক্সই নয়, রাশিয়ায় গর্ভপাতও নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে সরকার। সেই মর্মে একটি আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন
একটি গির্জার প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। তথ্য বলছে, রাশিয়ায় গর্ভপাতের ৯০ শতাংশই হয় সরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষেরই বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভপাত করানোর ক্ষমতা নেই। এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, গর্ভপাত নিষিদ্ধ করলে বহু মহিলার স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বেবি বক্স ব্যবস্থা যাঁরা সমর্থন করেন, সেনেটরের প্রস্তাবের বিরোধিতায় তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। রাশিয়ার একটি দৈনিকের দাবি, বেবি বক্সের কল্যাণে ২০১১ সাল থেকে ৫০ জন শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই বাক্সের ভরসায় অনেক মা-ই
এত দিন এগিয়ে এসে তাঁদের
বাচ্চাকে সরকারের জিম্মায় রেখে যেতে পারতেন। এটা বন্ধ হলে জঙ্গলে বা আবর্জনার স্তূপে বাচ্চা ফেলে রাখার প্রবণতা ফিরে আসবে। তাতে বাড়বে শিশুমৃত্যু।
অপরিণত বয়সে গর্ভবতী হওয়া বা গর্ভপাতের মূলে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা ও সচেতনতার অভাব। রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার শাখার একটি রিপোর্টে (২০১৪) বলা হচ্ছে, ‘‘বেবি বক্স নিষিদ্ধ করতে রাশিয়া সব রকম ব্যবস্থা নিক। তবে বিকল্পও ভাবুক।’’ কিছু নিষিদ্ধ করাই যে সমস্যার সমাধান নয়, তা বলছে আজকের নেট-প্রজন্ম। রাশিয়ার সামনে এখন দু’টো রাস্তা। মানুষকে সচেতন করা। নয়তো গর্ভপাত বা বেবি বক্স নিষিদ্ধ করে আরও দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে যাওয়া।