নেপাল সীমান্তে গুলি, নিহত ভারতীয়

প্রতিবাদ চলছিল অনেক দিনই। এ বার তাতে যোগ হল মৃত্যুও। ভারত-নেপাল সীমান্তে আজ নেপাল পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক ভারতীয় যুবক। যে ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলিকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। সোমবার ভারত-নেপাল সীমান্তের কাছে বীরগঞ্জে। — এএফপি

প্রতিবাদ চলছিল অনেক দিনই। এ বার তাতে যোগ হল মৃত্যুও।

Advertisement

ভারত-নেপাল সীমান্তে আজ নেপাল পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক ভারতীয় যুবক। যে ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলিকে। তবে ভারত-নেপাল সীমান্তে মদেশীয়রা সরব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তা হলে ভারতীয়ের মৃত্যু হল কেন? তবে কি বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন ভারতীয়রাও? উঠছে সেই প্রশ্নও।

বেশ কিছু দিন ধরে নেপালের ওই সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। কিন্তু কেন?

Advertisement

নেপালি সংবিধানে সমানাধিকার দাবি করে বীরগঞ্জ-রক্সৌল সীমান্তে প্রতিবাদে বসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয়রা। এই বিক্ষোভ থেকেই পেট্রোল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন তৈরি হয়। এই আর্থিক-সঙ্কটের জেরে আঙুল ওঠে ভারত সরকারের দিকে। যে অভিযোগ উড়িয়ে ভারত জানায়, নেপালের দিকে প্রতিবাদের জেরেই পণ্য-সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। নেপালেরই উচিত রাজনৈতিক পথে এর সমাধান খোঁজা।

ভারত থেকে তেল না পেয়ে দিন পাঁচেক আগেই চিনের সঙ্গে জ্বালানি সংক্রান্ত চুক্তি সেরেছে নেপাল। চুক্তি সম্পর্কে বিশদে কিছু জানা না গেলেও নেপালকে এক হাজার টন জ্বালানি চিন অনুদান হিসেবে দেবে বলে বেজিংয়ে নেপালি দূতাবাস সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। চিন থেকে পেট্রোলবাহী ১২টি ট্রাক নেপালে ঢুকেছে আজই।

নেপালের দাবি, ভারতই সীমান্তে বাণিজ্যিক যোগাযোগের তিনটি পথ বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও সেই দাবি উড়িয়েছে ভারত। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মোদী-ওলি কথায় এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তেল বা অন্য জরুরি পণ্য সরবরাহে ভারতের দিক থেকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি বলে ওলিকে জানিয়েছেন মোদী। একই সঙ্গে এই সঙ্কট দূর করার পথ দ্রুত খুঁজে বার করার কথাও বলেছেন তিনি। দিল্লিতে নেপালের দূত দীপকুমার উপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছে ভারত সরকার।

তবে আজ মোদী-ওলির ফোনে কথা হওয়ার আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কাঠমান্ডুতে এক অনুষ্ঠানে ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি
দিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেন না। ওলির দাবি, ‘‘চারটি মদেশীয় পার্টির পিছনে মদত দিচ্ছে ভারত।’’

নেপালে দীর্ঘ প্রতিবাদের জেরে সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে সীমান্তের বিভিন্ন অংশে। আজ বীরগঞ্জের নানা এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় প্রতিবাদী এবং পুলিশের মধ্যে। বীরগঞ্জের শঙ্করাচার্য গেটে প্রতিবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথমে লাঠি চালায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এর পরে গুলি ছোড়া শুরু করে তারা। এই সময়ই ১৯ বছরের আশিস রাম নামে এক প্রতিবাদী যুবকের মাথায় গুলি লাগে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মোবাইল থেকে তাঁর মামাকে ফোন করে পরিচয় জানা গিয়েছে। বিহারের রক্সৌলের বাসিন্দা আশিস।

ভোর হওয়ার আগেই আজ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয় প্রতিবাদীদের উপরে চড়াও হয় নেপাল পুলিশ। তাঁদের তাঁবু পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভারত-নেপাল সীমান্তের মিতেরি সেতু থেকে উৎখাত করারও চেষ্টা করা হয় প্রতিবাদীদের। বীরগঞ্জ-রক্সৌল সীমান্তে আজ ভারতীয় যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও। মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘‘আমরা ভীষণ চিন্তিত। এক জন নিরপরাধ ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছেন। নেপালে যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সমস্যা। পুলিশ দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। নেপাল সরকারের উচিত বিশ্বাসযোগ্য ভাবে এমন পদক্ষেপ করা, যা ফলপ্রসূ হবে।’’ পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে ভারতীয় পরিবহণ-ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের দাবি, ‘‘আমরা তাঁদের বলছি নিজেদের বিপদে ফেলে কিছু করতে
যাবেন না। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি আমরা।’’

বিহার-রক্সৌল সীমান্তে এখন কার্ফু জারি করা হয়েছে। ওই অংশে আজ নেপালের দিক থেকে আটকে থাকা অন্তত দু’শোটি খালি ট্রাক ভারতের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। পুলিশ তখন এলাকার দখল নেয়। পুলিশের দাবি, এই সময় প্রতিবাদীদের কাছ থেকে পাথর ধেয়ে আসে তাঁদের দিকে। জখম হন আট জন পুলিশ।

সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে
কিছুটা তিক্ততা তৈরি হয়েইছিল। এই অবস্থায় নেপাল হয়তো প্রতিবেশী দেশ চিনের কাছে সাহায্য চাইতে পারে— অনুমান করেছিল
সাউথ ব্লক। শেষ পর্যন্ত সেটাই ঘটায় ভারত মনে করছে, নেপালে ভারত-বিরোধী প্রচার আরও বাড়বে।
আর তাতে ঘি ঢালবে আজকের এই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন