ওবামার ‘উপহার’ চান না ফিদেল

মিষ্টি কথায় ভুলবেন না। সদ্য কিউবা ঘুরে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তৃতার জবাবে নিজের দেশের মানুষকে এ ভাবেই সতর্ক করলেন কিউবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো। বলে দিলেন, আমেরিকার কাছ থেকে কোনও ‘উপহার’ চাই না আমাদের।

Advertisement
হাভানা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

মিষ্টি কথায় ভুলবেন না। সদ্য কিউবা ঘুরে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তৃতার জবাবে নিজের দেশের মানুষকে এ ভাবেই সতর্ক করলেন কিউবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো। বলে দিলেন, আমেরিকার কাছ থেকে কোনও ‘উপহার’ চাই না আমাদের।

Advertisement

প্রায় ন’দশক পরে গত সপ্তাহে কিউবায় পা ফেলেছিলেন কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিন দিনের সেই সফরে অবশ্য তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কিউবার বর্ষীয়ান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। নিজের কোনও বক্তৃতা বা কথা প্রসঙ্গে এক বারও ফিদেল কাস্ত্রোর নাম উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি ওবামাকে। ফিদেলের ভাই এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর মুখোমুখি হয়েছিলেন ওবামা। সেই সময়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না মিললেও কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক ‘গ্রানমা’য় গত কাল ওবামার উদ্দেশে ১৫০০ শব্দের একটি চিঠিতে নিজের মতামত জানিয়েছেন ফিদেল কাস্ত্রো। ‘ব্রাদার ওবামা’ সম্বোধনে ওই চিঠিতে কাস্ত্রো চোখা চোখা শব্দ ব্যবহারে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওয়াশিংটনের মিষ্টি কথায় ভুলতে তিনি রাজি নন।

কিউবার মঞ্চে ওবামা বলেছিলেন, ‘‘ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে হাভানা। কিন্তু এই রাস্তাটা পেরোতে অনেক বাধা পার করতে হয়েছে। ইতিহাস, মতাদর্শের বাধার সঙ্গে পেরোতে হয়েছে যন্ত্রণা আর বিচ্ছেদের বাধাও।’’ জানিয়েছিলেন, এ বার সে সব ভুলে কিউবার মানুষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু অতীত যন্ত্রণা এত সহজে ভুলে যাওয়া কি সম্ভব, প্রশ্ন তুলেছেন কাস্ত্রো। কিউবার উপরে আমেরিকার দীর্ঘ আগ্রাসনের ইতিহাস চিঠিতে ফিরে দেখে তিনি লিখেছেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে এ সব শুনে আমাদের যে কারও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে!’’

Advertisement

কাস্ত্রোর সাফ কথা, ন’দশক ধরে আমেরিকার সাহায্য ছাড়াই কিউবা এগিয়েছে। তাই এখন তাদের ‘উপহারের’ প্রয়োজন নেই। কিউবা বা আমেরিকা— দু’দেশে কী ভাবে সাধারণ মানুষকে শেষ হয়ে যেতে হয়েছে, ওবামার বক্তৃতায় সে কথা উঠে আসেনি বলে ক্ষুব্ধ কাস্ত্রো। শিক্ষা-স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিউবার অগ্রগতি সম্পর্কেও কোনও উল্লেখ ছিল না মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তৃতায়। তা নিয়েও অসন্তুষ্ট কিউবার প্রাক্তন নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ যেন ভেবে না নেন, এই মহান এবং নিঃস্বার্থ দেশের মানুষ এই দেশের ঐতিহ্য এবং অধিকার ভুলে যাবে। আমরা আমাদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি।’’

কিউবার বিপ্লবী সরকার যে ভাবে বর্ণবৈষম্য দূর করার চেষ্টা করেছে, তা নিয়েও ওবামার চুপ থাকাকে সমালোচনা করেছেন কাস্ত্রো। চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘ওঁর প্রতি আমার সবিনয় পরামর্শ, কিউবার রাজনীতি নিয়ে কোনও বিশদ তত্ত্ব খাড়া করবেন না।’’ রাজনীতিতে তাঁর তুলনায় অনেকটাই নবীন বারাক ওবামাকে প্রবীণ নেতার কটাক্ষ, ‘‘ওঁর যখন দশ বছর বয়সও হয়নি, কিউবার সব মানুষ তখন থেকে অবসরকালীন ভাতা এবং বেতনের সুবিধা ভোগ করে আসছেন!’’

কাস্ত্রোর এই প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট বলছেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে কিউবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
যে এত সব কথা বলেছেন, তা
থেকেই পরিষ্কার এই সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’’ সংবাদ সংস্থা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন