নরওয়ের ঘাতক তার গুরু, ব্রেন্টন জানাল ইস্তাহারে

‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নামে ওই ইস্তাহারে ২৮ বছরের ব্রেন্টন জানিয়েছে, নরওয়ের গণহত্যাকারী অ্যান্ডের্স বেরিং ব্রেইভিকের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে, এমন লোকজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৬
Share:

ব্রেন্টন ট্যারান্ট জানিয়েছে, নিউজ়িল্যান্ডে হামলার পরিকল্পনা ছিল না প্রথমে। গুলির ম্যাগাজ়িনের গায়ে লেখা শ্বেত সন্ত্রাসবাদীদের নাম। এই ছবি টুইটারে পোস্ট করে ব্রেন্টন।

খাতায়-কলমে সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। কিন্তু পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে সে ইউরোপীয় বলে দাবি করেছে। নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বন্দুক নিয়ে হত্যালীলা চালানোর ঠিক আগেই অনলাইনে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেছে ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ছত্রে ছত্রে মুসলিম আর শরণার্থীদের প্রতি প্রবল ঘৃণা ও অতি দক্ষিণপন্থায় চরম বিশ্বাস।

Advertisement

‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নামে ওই ইস্তাহারে ২৮ বছরের ব্রেন্টন জানিয়েছে, নরওয়ের গণহত্যাকারী অ্যান্ডের্স বেরিং ব্রেইভিকের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে, এমন লোকজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল। মুসলিম আর শরণার্থীদের প্রতি চরম বিদ্বেষী ব্রেইভিক ২০১১ সালে অসলোয় এক সামার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করেছিল। তাকেই ‘গুরু’ বলে মানে ব্রেন্টন। বিচারে ব্রেইভিকের ২১ বছর জেল হয়েছে ২০১২ সালে। গণহত্যার আগে সে-ও অনলাইনে একটি ইস্তাহার দিয়েছিল। সেটি ছিল ১৫০০ পাতার। ‘গুরু’-র তুলনায় ব্রেন্টনের ইস্তাহারটি ছোট। ৭৩ পাতার। তবে খুবই অগোছালো লেখা। সাড়ে ষোলো হাজার শব্দ খরচ করে নিজের ব্যক্তিসত্তা ও আদর্শ নিয়ে প্রচুর কথা লিখেছে সে। এই হামলার জন্য তার কোনও আফসোস থাকবে না বলেও জানিয়েছে শেষে। মনোবিশ্লেষকদের মতে, ব্রেইভেকের মতো ব্রেন্টনও জগত-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন, কল্পজগতের বাসিন্দা। ইস্তাহারে সে লিখেছে, ‘‘জেল থেকে ২৭ বছর পর বেরিয়ে আমিও নোবেল পুরস্কার পাব, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো।’’

দু’টি মসজিদে হামলাকারীদের মধ্যে চার জন তাদের কব্জায় বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মতে, ব্রেন্টনই মূল ষড়যন্ত্রকারী। একমাত্র তার বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ব্রেন্টন গত কয়েক মাস ধরে নিউজ়িল্যান্ডে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। টুইটার, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় সে নিয়মিত অতি দক্ষিণপন্থী বার্তাও পোস্ট করত। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিউজ়িল্যান্ড পুলিশের নজরে সে কেন ছিল না, সেই প্রশ্ন তুলেছে দেশের বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

ইস্তাহারে ব্রেন্টন জানিয়েছে, নিউজ়িল্যান্ডে হামলার পরিকল্পনা ছিল না প্রথমে। প্রথমে ইউরোপের কোনও দেশের মসজিদকে নিশানা করবে বলে ভেবেছিল সে। কিন্তু শেষ তিন মাসে ছক পাল্টায়। তার বক্তব্য, মুসলিম আর শরণার্থীরাই বিশ্বের যাবতীয় সমস্যার মূলে। নিউজ়িল্যান্ডের মতো দেশে হামলা করে সে এটাই বুঝিয়ে দিতে চায় যে, কোনও দেশই তাদের জন্য সুরক্ষিত নয়। হামলার কারণ হিসেবে ব্রেন্টন উল্লেখ করেছে এবা একারল্যান্ড নামের এক কিশোরীর কথাও। ২০১৭-এর এপ্রিলে স্টকহলমে এক উজবেক জঙ্গি ট্রাক নিয়ে পিষে দিয়েছিল পথচারীদের। তাদের মধ্যে ছিল এগারো বছরের এবাও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিজের সম্পর্কে ব্রেন্টন লিখেছে, ‘‘আমার ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ, দার্শনিক চিন্তাধারা, আমার সত্তা, বিশেষ করে আমার রক্ত ইউরোপীয়।’’ নিজেকের সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত সাধারণ এক জন শ্বেতাঙ্গ আমি। সাধারণ পরিবারে বেড়ে উঠেছি, যে নিজের লোকেদের ভবিষ্যতের জন্য রুখে দাঁড়াতে জানে। আমার বাবা-মা স্কটিশ এবং আইরিশ। খুব সাধারণ ছেলেবেলা কেটেছে।’’

ইস্তাহারের প্রশ্নোত্তর অংশে নিজেকে অন্তর্মুখী বলে দাবি করেছে ব্রেন্টন। নিজেকে ফ্যাসিস্ত বলেছে সে। ব্রেন্টন চায়, গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম যেন বেশি করে তার খবরটা দেখায়। তার ধারণা, এই হামলার প্রভাব পড়বে আমেরিকায়। এবং বিশ্ব রাজনীতিতে। কেন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নিতে হল তাকে? ব্রেন্টনের জবাব, ‘‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন