পার্লামেন্টে অনাস্থায় ফের চাপে রাজাপক্ষ

দেশের প্রধানমন্ত্রী এখন কে? ডামাডোল শুরুর কুড়ি দিন পরেও প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই গেল। প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করলেও গদি ছাড়তে নারাজ ‘ক্ষমতাচ্যুত’ রনিল বিক্রমসিংহে।

Advertisement

 সংবাদ সংস্থা

কলম্বো শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫১
Share:

প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। ছবি: রয়টার্স।

চেষ্টায় খামতি রাখেননি প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। রাতারাতি প্রধানমন্ত্রী পাল্টে পার্লামেন্টও ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। গত কাল তাতে জল ঢেলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ বেঁকে বসল পার্লামেন্টও। দেখা গেল, মাহিন্দা রাজাপক্ষের পক্ষে কার্যত কেউ নেই। বুধবার পাশ হয়ে গেল তাঁর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব।

Advertisement

তা হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী এখন কে? ডামাডোল শুরুর কুড়ি দিন পরেও প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই গেল। প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করলেও গদি ছাড়তে নারাজ ‘ক্ষমতাচ্যুত’ রনিল বিক্রমসিংহে। এখনও তিনি প্রধানন্ত্রীর সরকারি বাসভবন আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। এ দিকে আজ পার্লামেন্টে যা হল, তাতে তাঁর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিই (ইউএনপি) যে জিতে বেরিয়ে গেল— এমনটাও বলা যাচ্ছে না। পর-পর দু’দিন ধাক্কা খেলেও দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার ক্ষমতা এখনও সিরিসেনার হাতেই বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।

শ্রীলঙ্কায় ‘লঙ্কাকাণ্ড’ তাই অব্যাহত। ২৬ অক্টোবর বিক্রমসিংহের সরকারকে বরখাস্ত করে, কুর্সিতে রাজাপক্ষের নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। পার্লামেন্ট ভাঙতে চেয়ে এবং ৫ জানুয়ারি নয়া নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে ডিক্রিও জারি করেছিলেন তিনি। কাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পার্লামেন্ট আজ পুনর্বহাল হওয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় আরও এক প্রস্ত নাটক!

Advertisement

বাইরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা এবং ভিতরে প্রবল হট্টগোলের মধ্যেই আজ এমপি ছেলেকে নিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকেন রাজাপক্ষ। এবং তার পর-পরই বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ভেস্তে দিতে হাঙ্গামা শুরু করে দেন তাঁর দলের লোকেরা। পাল্টা ধ্বনি-ভোটের দাবি ওঠে পার্লামেন্টের একটা বড় অংশ থেকে। স্পিকার তা চালু করতেই ফের গন্ডগোল। রাজাপক্ষের দলের এমপি-রা পার্লামেন্টের ধাতব প্রতীক আঁকড়ে ভোটাভুটিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্পিকার কারু জয়সূর্য তবু ভোট চালু রাখতে বলেন। পরে তিনিই ঘোষণা করে দেন— ‘‘ভোটে স্পষ্ট, এই হাউসের প্রতি আস্থা

নেই হাউসের।’’

পাল্টা সুর চড়িয়ে রাজাপক্ষের কয়েক জন মন্ত্রী কক্ষত্যাগ করেন। তাঁরা বলতে থাকেন, তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন একটা ভোট করিয়ে পার্লামেন্টের শিষ্টাচার ভেঙেছেন স্পিকার। জয়সূর্যের বিরুদ্ধে বিক্রমসিংহের প্রতি পক্ষপাতেরও অভিযোগ ওঠে।

সঙ্কট বহাল থাকলেও, ইউএনপি কিন্তু আজ রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে নিজেদের নৈতিক জয় বলেই মনে করছে। বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে বিক্রমসিংহে আজও নিজেকে ‘বৈধ’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করে ঘোষণা করেন, ‘‘দেশের পুলিশ এবং সব সরকারি কর্মচারীকে বলছি, তাঁরা যেন অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় আসা সরকারের কোনও নির্দেশ না মানেন। ওরা তো আস্থাই জোটাতে পারেনি।’’ জানা গিয়েছে, আগে রাজাপক্ষকে সমর্থন দিলেও, আজ অনাস্থা প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন অন্তত ৫ জন এমপি। আর পার্লামেন্টে যে হেতু ইউএনপি-রই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তাই বিশেষ বেগ পেতে হয়নি বিক্রমসিংহেদের।

রাজাপক্ষ এবং তাঁর ছেলে নামাল রাজাপক্ষ অবশ্য আজকের ভোটকে মান্যতাই দিতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন