শি চিনফিং। ছবি: রয়টার্স।
চৈনিক চাপ সামলানোর মুখেই সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার সম্ভাবনায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শি আজই বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে তিরস্কার করে বলেছেন, ক্ষমতার হাতবদল ‘নোংরা প্রতিযোগিতার’ জন্ম দেয়। নয়াদিল্লি এটা জানে যে, শি চিনফিং-এর কতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তাঁর স্বপ্ন প্রকল্প ‘ওবর’ এবং ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’-এর কাজ আগ্রাসী ভাবে শুরু হয়ে যাওয়া। ওবর-এর অধীনে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে যে সব প্রস্তাবিত পরিকাঠামো প্রকল্প রয়েছে তা কার্যত গোটা বিশ্বে চিনের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যেই তৈরি। ভারত আগাগোড়া ওবর প্রকল্পের বিরোধ করে এসেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এর ফলে অনেক গরিব দেশ যে ঋণের ফাঁদে জর্জরিত হবে তা-ই নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার কাঠামোটাও নড়বড়ে হয়ে যাবে। কিন্তু ভারতের এই আপত্তিতে কর্ণপাত করেননি শি।
ড্রাগনকে সামলাতে এখনই হিমসিম খাচ্ছে সাউথ ব্লক। ডোকলাম পরবর্তী অধ্যায়ে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর করার জন্য কূটনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বছর দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একাধিক বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। বেজিংকে খুশি করতে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার অনুষ্ঠান বয়কটের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্তাদের।
তার পরেও, কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দেশে শি-র একাধিপত্যে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বেজিং-এর অতিসক্রিয়তা বাড়বে। চিনা বিদেশনীতি এবং প্রতিরক্ষা নীতি আরও আগ্রাসী হবে। যা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। শি-র আমলে চিন-পাকিস্তান অক্ষ অনেক গুণ মজবুত হয়েছে। বেজিংয়ের ওপর ইসলামাবাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতাও গত কয়েক বছরে বহু গুণ বেড়েছে। প্রতিবেশী ভুটান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে এ বছরেই নির্বাচন। ভারতের জন্য এই বছরটি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে মলদ্বীপ। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন যে চিনের হাতে তামাক খেয়ে নয়াদিল্লিকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন, সেটা এখন স্পষ্ট। মনে করা হচ্ছে, শি-এর হাত আবদুল্লার মাথায় রয়েছে বলেই এই সাহস তিনি দেখাতে পারছেন।
শুধু ভারতই নয়। কূটনীতিকরা মনে করছেন— ৬৪ বছরের শি মাও জে দংয়ের মতো আজীবন শাসক থাকলে তার প্রভাব এশিয়ার সামগ্রিক ভূকৌশলগত ক্ষেত্রে পড়বে। চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান শি চাইবেন ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীকেও অত্যাধুনিক সমরসজ্জায় সজ্জিত করতে।
সব মিলিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে নয়াদিল্লির।