Bangladesh Unrest

হাদির মৃত্যুর জেরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেও থামানো যায়নি অশান্তি! এ বার কি বানচাল হবে ভোট?

বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এব‌ং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ‘বিবিসি বাংলা’-র প্রতিবেদন অনুসারে, দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভিতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৫০
Share:

বিক্ষোভ বাংলাদেশের রাস্তায়। ছবি: সংগৃহীত।

বৃহস্পতিবার রাতে ১০টার কিছু পরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছিল সিঙ্গাপুর হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ। তা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তড়িঘড়ি জাতির উদ্দেশে ভাষণে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করল না বাংলাদেশ! সরকারি ভবন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সদর দফতর এমনকি, গত বছরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ৩২ ধানমন্ডিতে নিহত জাতির জনক শেখ মুজিবের ভবনে আছড়ে পড়ল ‘সংগঠিত জনরোষ’।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকেরাও। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এব‌ং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ‘বিবিসি বাংলা’-র প্রতিবেদন অনুসারে, দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভিতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়। আটকে পড়া সাংবাদিকদের একাংশ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। অন্য দিকে, খুলনায় এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। ময়মনসিংহে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এক যুবককেও পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে কট্টর ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। রাজশাহীতেও মুজিবের অপর একটি বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের দফতর ভাঙচুর করা হয়েছে। বাংলাদেশের বহু জায়গাতেই বিক্ষোভকারীদের মুখে ছিল শেখ হাসিনা এবং ভারত-বিরোধী স্লোগান। চট্টগ্রামে ভারতীয় উপদূতাবাস লক্ষ্য করে ঢিল-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। রাত থেকে উপদূতাবাসের সামনে অবস্থানে বসেন ছাত্র-যুবদের একাংশ।

পাকিস্তান জমানায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের দফতরে হামলা হয় গভীর রাতে। অভিযোগ, কট্টরপন্থী স্লোগান দিতে দিতে সংগঠিত ভাবে মিছিল করে গিয়ে সেখানে হামলা চালানো হয়। চলে তাণ্ডব ও লুটপাট। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি-বই। ভেঙে ফেলা হয়েছে অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রও। বিক্ষোভকারীরা ছিঁড়ে দেন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সঞ্জীদা খাতুনের ছবিও। রেহাই পায়নি লালন এমনকি কবি নজরুল ইসলামের ছবিও! ছায়ানটের নববর্ষ উৎসব ইউনেস্কো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। কিন্তু গত বছরের ৫ অগস্টের পালাবদলের পর থেকেই কয়েকটি কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বাংলা নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনের বিরোধিতা করেছে প্রকাশ্যে। শুক্রবার সকাল থেকে শাহবাগ-সহ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর সদস্যেরা। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। ৩২ ধানমন্ডিতে নতুন করে হামলা ও ভারী হাতুড়ি, শাবল নিয়ে মুজিবের বাড়ির দেওয়াল ভাঙা হয়।

Advertisement

বাংলাদেশে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত।

ঘটনাপ্রবাহ এবং নতুন অশান্তি

জুলাই আন্দোলনের (২০২৪ সালের অগস্ট মাসে যার জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন) অন্যতম নেতা শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ইনকিলাব মঞ্চ নামে সামাজিক ও রাজনৈতিক মঞ্চের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। জাতীয় সংসদের আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা-৮ থেকে প্রার্থী হওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। সঙ্গীরা জানাচ্ছেন, জুম্মার নমাজ সেরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চেপে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন হাদি। সঙ্গে ছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁদের পিছনে ছিল একটি মোটরবাইক। দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাইকে চালকের পিছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ। তার পরেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বাইক-আরোহীরা।

প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় হাদিকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একটি গুলি তাঁর কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। হাদিকে ‘লাইফ সাপোর্ট’-এ রাখা হয়। পরে তাঁকে ঢাকার অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইউনূস সরকারের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের এক কর্মী হাদির মাথায় গুলি করেন। ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা পুলিশ জানায়, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল। পুলিশের দাবি, তিনি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের (আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন) নেতা। গত বছরের ১ নভেম্বর অস্ত্র-সহ ফয়সালকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ চালু হবে বলে সেদিনই জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। তদন্তকারীদের সূত্র বলে, গুলি চালানোর ঘটনায় তিন জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাইকের পিছনে বসে গুলি চালান ফয়সাল। চালক ছিলেন আলমগীর শেখ। আলমগীর যুবলীগের সদস্য ছিলেন। হাদিকে যখন ধাওয়া করা হচ্ছিল, তখন ফয়সাল, আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন জাকির নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ দাবি করে তাঁরা ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। যে বাইকে চেপে গুলি চালানো হয়েছিল, তার মালিককে গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে আটক করে র‌্যাব।

১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলে, দুই সন্দেহভাজন ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সে দিনই নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় ফয়সালের এক সহযোগীকে। তাঁর নাম মহম্মদ কবীর। ফয়সালের বোনের আগারগাঁওয়ের বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সেই ব্যাগের ভিতর দু’টি ম্যাগাজিন এবং ১১টি গুলি মেলে বলে দাবি করেন তদন্তকারীরা। পরের দিন র‌্যাব জানায়, ফয়সালের বাবা, মাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। অভিযোগ, তিনি ফয়সালকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। ওই দিন পর্যন্ত হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন থেকেই হাদির শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর আসতে থাকে সিঙ্গাপুর থেকে আর উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে ‘প্রথম আলো’র দফতরে ভাঙচুর ও তাণ্ডবের পরের অবস্থা। ছবি: সংগৃহীত।

কে এই ওসমান হাদি?

জন্ম বরিশালে। বাবা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হাদিই ছিল সর্বকনিষ্ঠ। এ হেন হাদি মাদ্রাসা শিক্ষাশেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। জীবনের মোড় বদলে যায় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি। সে বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। মূলধারার কোনও রাজনৈতিক দলে সক্রিয় ভাবে যুক্ত না থাকলেও সেই সময় থেকেই আন্দোলনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন হাদি। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে হওয়া আন্দোলনে যে সব নেতা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, হাদি তাঁদের একজন হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে তাঁর ‘ভারত বিদ্বেষী’ বক্তৃতা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। বলা যেতে পারে, হাদির রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল এই আন্দোলনের সময় থেকেই।

জুলাই আন্দোলনের পর হাদির নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার একাংশ গড়ে তোলে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। এই মঞ্চের মূল দাবি ছিল, যাবতীয় আধিপত্যবাদের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের দাবি প্রতিষ্ঠা করা। ক্রমে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারি হয়ে ওঠে হাদির দল। চলতি বছরে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ইউনিটি’ গড়ে ওঠে, সেখানেও ইনকিলাব মঞ্চের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় হাদির সক্রিয় উপস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়। ক্রমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায়, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ-সহ নানা বিষয়ে বক্তৃতা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন হাদি। তাঁর বক্তৃতার ভাষা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে হাদির এই নির্ভীকতার প্রশংসা করে হয়ে ওঠেন তাঁর সমর্থক। কেউ কেউ আবার তাঁর ভাষাকে অশালীন বলে সমালোচনা করতে শুরু করেন। অবশ্য সে সবে কান দেননি তরুণ নেতা। আপাত অশালীন ভাষাকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ আখ্যা দিয়ে নিন্দকদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে হাদি ছিলেন একজন শিক্ষক, স্বামী এবং এক সন্তানের পিতা। সমাজমাধ্যমেও সর্বক্ষণের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল তাঁর। গত নভেম্বরে হাদি নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাঁকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকেরা সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে তাঁকে। হাদির মৃত্যুর পরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। ছাত্র-যুবদের একাংশ স্লোগান তুলেছে, ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা কব’। শেখ হাসিনা এবং ভারত-বিরোধী স্লোগানও শোনা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের মুখে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাদির মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পরে জনতার পাশাপাশি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীদেরও শ্রদ্ধা জানানোর ঢল নেমেছে।

ইউনূসের আবেদন এবং ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হওয়ার কথা। তার আগেই উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভে উত্তাল সে দেশের নানা এলাকা। এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী আধিকারিক এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা না-হলেও কমিশনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘কালের কণ্ঠ’ এমনটাই জানিয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দফতরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের অন্য আধিকারিকদেরও নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। ওই সুত্রের আরও দাবি যে, কমিশনকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চলা দুই সম্ভাব্য প্রার্থী।

ঘটনাচক্রে, হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগের দিনই নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ত ১২ ডিসেম্বর থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি চলবে মনোনয়ন পরীক্ষার কাজ। কোনও মনোনয়ন বাতিল হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি হবে সেই আপিলগুলির যথার্থতা যাচাইয়ের কাজ। চূড়ান্ত প্রার্থিতালিকা প্রকাশ এবং নির্বাচনী প্রতীক নির্ধারণ করা হবে ২১ জানুয়ারি। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারের পালা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। তবে এর পর নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ পরিকল্পনামাফিক হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ইউনূস আবার দেশবাসীকে ‘ধৈর্য ও সংযম’ বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার শোকদিবস পালন করা হবে বলেও জানান। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক এই অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি-সহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। দুষ্কৃতীদের নির্মম হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি নিহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।” দুষ্কৃতীদের কঠোর হাতে দমন করার ডাকও দিয়েছেন আলমগীর। একই সঙ্গে সংবাদপত্রের অফিসে হামলার নিন্দা করেছেন তিনি।

অন্য দিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-ও এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আর্জি জানিয়েছে। দলের নেতা শফিকুর রহমান সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, “দেশটা আমাদের সকলেরই অস্তিত্বের অংশ। আশা করি সকলেই সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেব।” শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ভাঙচুরের ভিডিয়ো সংবলিত সংবাদ প্রতিবেদন পোস্ট করা হয়েছে। সংবাদপত্রের অফিসে হামলার নিন্দা করে হাসিনার দল লিখেছে, “এই লুট আর হাঙ্গামার রাজত্ব কায়েম করেছে ইউনূস সরকার, এনসিপি (জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-যুবদের একাংশের দল) আর জঙ্গিগোষ্ঠী।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement