Nepal Unrest

সরকার পতনের পরও গণরোষে ইতি নেই নেপালে, খোঁজ নেই নেতাদের! কেন এমন পরিস্থিতি ভারতের উত্তরের পড়শি দেশে?

কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী) প্রধান তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড কিংবা ‘কট্টর ওলিবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খনালের বাড়িও রেহাই পায়নি। তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরকে পুড়িয়ে মেরেছে জনতা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:২৫
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারতের পূর্বদিকের পড়শি বাংলাদেশের মতো এক মাসের আন্দোলন নয়। নয় দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার মতো দীর্ঘদিনের আর্থিক সঙ্কটের জেরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। ফেসবুক-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার অভিঘাতে তরুণ ছাত্র-যুবদের (‘জেন জ়ি’ ইতিমধ্যেই যাঁরা পরিচিত হয়ে গিয়েছেন) গণবিক্ষোভের জেরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পতন হল নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের। ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌড়েলও (যদিও সরাকরি ভাবে এখনও সে কথা জানানো হয়নি)।

Advertisement

শাসকজোটের নেতা-মন্ত্রী-দফতরের পাশাপাশি মঙ্গলবার উন্মত্ত বিক্ষোভকারীদের নিশানা হল পার্লামেন্টের বিরোধীপক্ষও! কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী) প্রধান তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড কিংবা ‘কট্টর ওলিবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খনালের বাড়িও রেহাই পায়নি। তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরকে পুড়িয়ে মেরেছে জনতা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে আর্থিক মন্দায় ধ্বস্ত শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ জনতার নিশানা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং তদারকি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের (গণরোষের জেরে গোতাবায়ার দাদা মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরে যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন) সরকারি বাসভবনের দখল নিয়েছিল বিদ্রোহী জনতা।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন রূপ নিয়েছিল দেড় দশকের শাসকদল আওয়ামী লীগবিরোধী হিংসাত্মক বিক্ষোভে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরে তাঁর সরকারি আবাস গণভবনেরও একই পরিণতি হয়েছিল। গোতাবায়া বা হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। ওলি কী করবেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও মতা স্পষ্ট নয়। এমনকি, স্পষ্ট নয় তাঁর ‘অবস্থান’ও। সূত্রের দাবি, শ্রীলঙ্কার গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মতোই কমিউনিস্ট নেতা ওলিও দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই।

Advertisement

উত্তেজনার এই আবহে আবহে পড়শি দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে ভারত সরকার। মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। আন্দোলনে নিহত পড়ুয়াদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি, নেপালে বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্দেশে নয়াদিল্লির বার্তায় বলা হয়েছে, “কর্তৃপক্ষ কাঠমান্ডু এবং আরও কয়েকটি শহরে কার্ফু জারি করেছেন। নেপালে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং নেপাল প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে বলা হচ্ছে।” পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে সক্রিয় হয়েছে রাজ্য সরকারও। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েই মঙ্গলবার সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তড়িঘড়ি নেপাল সীমান্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী এসএসবির আধিকারিকদের সঙ্গে সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকেরা।

সোমের রক্তপাতের ‘প্রতিশোধ’ মঙ্গলবার

তরুণদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। হাজার হাজার তরুণ ছাত্র যুবক নেপালের পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক স্কুলপড়ুয়াও ছিল। অন্তত পোশাক দেখে তেমনই অনুমান। শুধু রাজধানী শহরেই নয়, বিক্ষোভ-বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়েছিল নেপালের অন্যত্রও। সোমবারের ওই বিক্ষোভে ওলির পুলিশ গুলি চালানোয় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের কয়েক জন স্কুলপড়ুয়াও ছিল! সোমবার গভীর রাতে ওলি সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করার পরেও তাই ক্ষোভের আঁচ কমেনি। বরং মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতেই তা আছড়ে পড়েছিল কাঠমান্ডুর রাজপথে।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমশ পুলিশ-প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণ করতে শূন্যে গুলি ছোড়ে পুলিশ। ছোড়া হয় রবারের গুলিও। কিন্তু জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সিপিএম (ইউএমএল), নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরের পাশাপাশি হামলা হয় বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী আরজু রানা প্রহৃত হন। নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে রাস্তায় ফেলে পেটায় জনতা। মঙ্গলবার দুপুরে নেপালের পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালিয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে নেপালের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরেও। প্রধানমন্ত্রী ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। তার আগে নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্রের বাসভবন শীতল আবাসেও হামলা হয়। রাতে পোখরার জেলে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে পালালেন প্রায় ৯০০ বন্দি। কাঠমান্ডুর নাখু জেলের একাংশে আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ।

গণবিদ্রোহের মূল কারণ

তবে শুধু সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞাই নয়, সোমবারের বিক্ষোভের নেপথ্যে আরও অনেক চাপা অসন্তোষ থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। মূল ধারার দলগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল ধারাবাহিক দুর্নীতির অভিযোগ। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছে নেপাল সরকার। তাদের বক্তব্য, সাইবার অপরাধ, ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর উপর রাশ টানার জন্যই এই পদক্ষেপ। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত মাসেই নেপাল সরকার বিভিন্ন সমাজমাধ্যম সংস্থার নিবন্ধীকরণ (রেজিস্ট্রেশন)-এর জন্য উদ্যোগী হয়। কোনও অভিযোগ জানানোর জন্য কোন সংস্থার আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সে বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়। এর জন্য গত ২৮ অগস্ট থেকে এক সপ্তাহের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিকে। এর মধ্যে যে সমাজমাধ্যমগুলি নেপাল সরকারের সঙ্গে নিবন্ধীকৃত হয়নি, সেগুলিকে গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ করে দেয় সে দেশের প্রশাসন।

নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সে দেশে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াট‌্‌সঅ্যাপ, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যদিও রয়টার্স জানাচ্ছে, যে সংস্থাগুলি নিবন্ধীকরণ সেরে নিয়েছে, সেগুলির উপর কোপ পড়েনি। এই তালিকায় রয়েছে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিমবাজ় এবং পপ্পো লাইভ। নেপালের প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার বলেছিলেন, তাঁর প্রশাসন সমাজমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু যে সমাজমাধ্যমগুলি নেপালে ব্যবসা করছে, তারা সে দেশের আইন মেনে চলছে না। এটি মেনে নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছিলেন ওলি। সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্দেশ মেনে চললেই এই সমাজমাধ্যমগুলি পুনরায় চালু হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের ওই পদক্ষেপে নেপালে অসন্তোষ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসলে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নেপালের অর্থনীতি অনেকাংশেই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা তাঁদের পেশাগত কাজের জন্য সমাজমাধ্যমেই যোগাযোগ করে থাকেন। পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম এই সমাজমাধ্যমগুলি। ফলে সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্মকেই নয়, সকলকেই সমস্যায় ফেলেছিল।

যুববিদ্রোহের মুখ সুদান গুরুং

নেপালের একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি বছর ছত্রিশের এক তরুণ, নাম সুদান গুরুং। ২০১৫ সাল থেকে ‘হামি নেপাল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালান। মূলত ছাত্র-যুবদের দ্বারা পরিচালিত এই সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরেই নেপালের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে থাকে। এক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘ডিস্ক জকি’ বা ‘ডিজে’ হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সুদান। ২০১৫ সালে একটি ভূমিকম্পে এক সন্তানকে হারান তিনি। তার পরেই স্থির করেন নেপালে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে কাজ করবেন তিনি। ২০১৫ সালের পরেই সুদান ত্রাণ এবং বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে হাত পাকাতে থাকেন। স্থানীয় স্তরে মেলামেশার ফলে নেপালের ছাত্র-যুবদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

অতীতে নেপালের বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ঘোপা ক্যাম্প আন্দোলনের শামিল হয়েছিলেন সুদান। সেই সময়ও এই যুবককে নেপালের একাংশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। তবে সোমবারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর নতুন করে আলোচিত হচ্ছে সুদানের নাম। নেপালের অনেকেই মনে করছেন সে দেশে ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে যুব সমাজের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিলই। সেটাকেই সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে কাজে লাগিয়েছেন সুদান। খাতায়কলমে এই আন্দোলনের হোতারা নিজেদের ‘জেন জ়ি’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন। বিভিন্ন পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, কেবল ফেসবুকের উপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণেই নয় নেপালের ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য, সরকারি স্তরে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের কারণেও ক্ষুব্ধ সে দেশে ছাত্র-যুবদের একাংশ। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নাম করে মঙ্গলবারও বিভিন্ন মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে ‘কেপি চোর, গদি ছোড়’। সুদান নিজে অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও তা ক্রমশ সহিংস রূপ নিয়েছে।

সুদানের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্টে জ্বলজ্বল করছে তাঁর ডিজে পরিচয়। তিনি গান বাজাচ্ছেন, এমন ভিডিয়োও রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে তাঁর অংশগ্রহণের ছবিও। সমাজমাধ্যম ব্যবহারে দক্ষ এই সুদানই এখন নেপাল সরকারের কাছে মাথাব্যথার কারণ। সমাজমাধ্যমের মাধ্যমেই তিনি নেপালের ছাত্র-যুবদের একাংশের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ‘টিকটক’-এর মতো যে অ্যাপগুলি সরকারি বিধিনিষেধের মুখে পড়েনি, সেগুলির মাধ্যমেই আন্দোলনকারীরা পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়েছে বলে অনুমান। আপাতত ‘ডিজে’ সুদানের ‘প্রতিবাদী’ গানের তালে যোগ্য সঙ্গত করছেন নেপালের ছাত্র-যুবরা। আর বেসুরে বাজছে নেপাল সরকার।

ওলির উত্তরসূরি কি আর এক তরুণ ‘আইকন’?

গণবিদ্রোহের জেরে ওলি সরকারের পতনের পরেই নেপালে পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সুযোগে রাজতন্ত্রের পুনরুত্থান হতে পারে সে দেশে। দেড় দশক আগে আর এক গণবিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত হলেও রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের অনুগামীদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু এ বারের আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ‘জেন জ়ি’র পছন্দ হিসেবে উঠে আসছে কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র, তথা জনপ্রিয় র‌্যাপার বছর পঁয়ত্রিশের বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেনের নাম? তাঁকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে করা একাধিক পোস্টে ইতিমধ্যেই জল্পনা ছড়িয়েছে।

২০২২ সালে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ৬১ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বলেন্দ্র। প্রতিষ্ঠিত দলগুলির প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের হারিয়ে দিয়ে সে দেশের অনেককেই চমকে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে কাঠমান্ডুতে জন্ম বলেনের। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে আসেন। নেপালে র‌্যাপার এবং সুরকার হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। নিজের সুরারোপ করা গানেও দুর্নীতি এবং আর্থিক বৈষম্য নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন বলেন্দ্র। র‌্যাপার হিসাবে পাওয়া জনপ্রিয়তাকে অস্ত্র করেই ভোটে দাঁড়ান তিনি। জয়লাভও করেছিলেন তিনি। নেপালের ছাত্র-যুব এ বারের আন্দোলনে শামিল না-হলেও দূর থেকেই তাকে সমর্থন করেছিলেন বলেন্দ্র। সরাসরি অংশগ্রহণ না-করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, এটা ‘জেন জ়ি’দের আন্দোলন। সেই হিসাবে আঠাশোর্ধ্ব কেউ আন্দোলনে যোগ দিক, তা চাননি বলেন্দ্র। তবে ছাত্র-যুবদের বক্তব্য সরকারের শোনা উচিত বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, “আমি ওঁদের (আন্দোলনকারী) ইচ্ছা, লক্ষ্য এবং ভাবনার কথা জানতে চাই।” এই আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার না-করার জন্য তিনি আর্জি জানান নেপালের রাজনৈতিক দলগুলিকে। সশরীরে হাজির না-থাকলেও আন্দোলনকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানান বলেন্দ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement