সন্ত্রাসবাদের বারুদ জমছে আগে থেকেই।
কট্টর মৌলবাদকে সক্রিয় মদতও জুগিয়ে এসেছে মলদ্বীপের আবদুল্লা ইয়ামিন সরকার। গণতন্ত্রের দফারফা হওয়া এই দ্বীপরাষ্ট্রে এ বার পাক সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ আরও মাথাচাড়া দিতে পারে। পরিস্থিতি না শোধরালে, আগামী দিনে ভারতের নাকের ডগায় একটা ‘মিনি-পাকিস্তান’ই গজিয়ে উঠতে
পারে বলে আশঙ্কা করছে উদ্বিগ্ন সাউথ ব্লক।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভারত থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে মলদ্বীপ। চিনের সহযোগিতায় সেখানে মৌলবাদের ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। লক্ষ্য, সমুদ্রপথে সন্ত্রাস পাচার করা। এখন অস্থির পরিস্থিতিতে গোটা দেশটাই না মৌলবাদীদের হাতে চলে যায়, এটাই এখন ভাবাচ্ছে নয়াদিল্লিকে।’’
পাকিস্তানের মাদ্রাসায় মলদ্বীপের ছাত্রদের জন্য বিশেষ বৃত্তি চালু রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ওই বৃত্তি নিতে ইসলামাবাদে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ইয়ামিনের জমানায়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এই যুবশক্তিই ক্রমশ লস্কর-ই-তইবার প্রশিক্ষিত জঙ্গিতে পরিণত হচ্ছে। মলদ্বীপের সরকারের রাজনৈতিক প্রচারেও হিংসাত্মক চরমপন্থাকে লঘু করে দেখা, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কট্টরপন্থা ঢুকিয়ে দেওয়া ও রাজনৈতিক দলের চরমপন্থী অংশকে সামাজিক ভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
অথচ এই মলদ্বীপ সম্পর্কেই নৃতত্ত্ববিদ তথা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ক্ল্যারেন্স মালোনি ১৯৭০ সালে বলেছিলেন, দেশটিতে ইসলাম শুধুমাত্র নমাজ আর রোজাতেই সীমাবদ্ধ। ধর্মাচরণ রয়েছে, কিন্তু ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব চাপিয়ে দেওয়া কিংবা চরমপন্থাকে আস্কারা দেওয়ার প্রয়াস নেই। কিন্তু ছবিটা পুরো বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
শুধু পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্তই নয়। মলদ্বীপ থেকে আইএস-এ যোগ দেওয়ার ঢলও রীতিমতো আশঙ্কাজনক। এটা শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও চিন্তার বিষয়। এখানকার এক-একটি পরিবার থেকে ১২ জন পর্যন্ত সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছে— এমন নজিরও কম নয়। ভারতের জন্য আইএসের যে মডিউল রয়েছে, তাতে মলদ্বীপের জঙ্গিরাই রয়েছে মূল ভূমিকায়। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মলদ্বীপই না একটা খুদে-পাকিস্তানে পরিণত হয়! ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে যা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়।