Internationsl

হাফিজ সইদ বিপজ্জনক, আন্তর্জাতিক মঞ্চে কবুল পাক মন্ত্রীর

বোধহয় একেই বলে বিলম্বে বোধোদয়! তা সে আন্তরিক উপলব্ধি থেকে হোক বা সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির ভয়ে! কট্টর সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সইদ যে পাকিস্তানের পক্ষেও ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’, শেষমেশ তা কবুল করলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীই। এত দিন পাকিস্তানেই বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করা সইদকে ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গৃহবন্দি’ করা হয়েছে বলে ইসলামাবাদের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৬:২৮
Share:

হাফিজ সইদ।

বোধহয় একেই বলে বিলম্বে বোধোদয়! তা সে আন্তরিক উপলব্ধি থেকে হোক বা সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির ভয়ে!

Advertisement

কট্টর সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সইদ যে পাকিস্তানের পক্ষেও ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’, শেষমেশ তা কবুল করলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীই। এত দিন পাকিস্তানেই বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করা সইদকে ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গৃহবন্দি’ করা হয়েছে বলে ইসলামাবাদের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। হাফিজ মুম্বই হামলার মূল চক্রী ছিল। তাকে বেশ কিছু দিন আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্তারা মনে করছেন, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘জামাত-উদ-দাওয়া’-র প্রধান হাফিজ সইদকে এত দিন পর গৃহবন্দি করা হলেও, আরেক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ওপর এখনও যথেষ্ট স্নেহশীল ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের ‘পছন্দের লোক’ মাসুদকে যাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে না পারে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ, তার জন্য ইসলামাবাদের হয়ে এই সে দিনও রাষ্ট্রপুঞ্জে বাগড়া দিয়েছে চিন। ফলে, মাসুদকে আড়াল করে আর হাফিজকে গৃহবন্দি করে ইসলামাবাদ বুঝিয়ে দিল, তারা সন্ত্রাসবাদীদেরও ভাল-মন্দের বাছবিচার করে।

Advertisement

হাফিজকে যে ‘গৃহবন্দি’ করা হয়েছে, সে কথা সোমবার জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ। ওই সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সইদ আমাদের দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। দেশের (পাকিস্তান) বৃহত্তর স্বার্থেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তবে এই সিদ্ধান্তে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রে রে করে উঠেছেন সইদের অনুগামী ও ‘জামাত-উদ দাওয়া’র সমর্থক সংগঠনগুলির নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এটা প্রমাণ করল পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভারতের হয়েই কাজ করছেন।’’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সমাবেশও হয়েছে লাহৌর, করাচি সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে।

পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, কট্টর সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সইদকে সন্ত্রাসবাদ দমন আইনের চতুর্থ তপশিলি মোতাবেক লাহৌরে গৃহবন্দি করা হয়েছে ৩০ জানুয়ারি। সইদ‌ যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে ওই কট্টর সন্ত্রাসবাদীর নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘একজিট কন্ট্রোল’ তালিকাতেও।

আরও পড়ুন- সরকারি টাকায় মন্দিরে মন্দিরে কোটি কোটির গয়না ভেট দিচ্ছেন রাও

সইদকে গৃহবন্দি করার পাক-ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে, এখন কেন? এত দেরি করে কেন হাফিজ সইদকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে মনে হল ইসলামাবাদের? সইদ তো এত দিন বহাল তবিয়তেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন পাকিস্তানে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও।

ঘটনা হল, চলতি মাসেই পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসবাদী হামলার মোট ৮টি ঘটনা ঘটেছে। তাতে কম করে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। একেবারে হালে সিন্ধু প্রদেশের একটি সুফি দরগায় আত্মঘাতী বোমা-হামলায় অন্তত ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাফিজকে অবশ্য এর আগেও এক বার গৃহবন্দি করা হয়েছিল। মুম্বই হামলার পরপরই। ২০০৮ সালের নভেম্বরে। কিন্তু তার পরের বছরেই পাক আদালতের রায়ে তিনি মুক্ত হয়ে যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা যদি হয় ঘরের বাস্তবতা, তা হলে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সইদের গৃহবন্দি হওয়ার খবর পাকিস্তান ঘটা করে ঘোষণা করে আমেরিকা ও ইউরোপকে বার্তা দিতে চাইল, সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ভাবেই মদত দেয় না, দিতে চায় না ইসলামাবাদ। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে দেখতেও নারাজ ইসলামাবাদ।

ওই সম্মেলনে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ধর্ম আর সন্ত্রাসবাদ সমার্থক নয়। সন্ত্রাসবাদীরা খ্রিস্টান নন, মুসলিম নন, নন হিন্দু বা বৌদ্ধও। তারা শুধুই সন্ত্রাসবাদী। তারা অপরাধী।’’

আমেরিকা যে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানকে বার বার শূলে চড়াচ্ছে, তার যুক্তিকে লঙ্ঘন করার চেষ্টায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ বলেছেন, ‘‘আমি গোটা বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, সন্ত্রাসবাদ দমনে আমরা (পাকিস্তান) অন্য দেশগুলির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চাই। কিন্তু পশ্চিমী (পড়ুন, আমেরিকা) দেশগুলি যদি আমাদের একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টায় নামে, তা হলে সেই লড়াইটা আমরা ঠিক ভাবে করতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন