প্রতীকী ছবি।
নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রতিবেশী এক কিশোরের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বছর সতেরোর ছেলেটি আবার সম্পর্কে নাবালিকার আত্মীয়। বিচার চেয়ে গ্রামের মোড়লের দ্বারস্থ হয়েছিল মেয়েটির পরিবার। পঞ্চায়েতের সদস্যরা নিদান দিলেন, সকলের সামনেই অভিযুক্তের নাবালিকা বোনকে ধর্ষণ করবে নির্যাতিতার দাদা!
পাকিস্তানে মুজফ্ফরবাদের রাজপুর গ্রামের ঘটনা। পরে অবশ্য দুই পরিবারের তরফেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। বুধবার মুলতান পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক আহসান ইউনিস জানিয়েছেন, সেই অভিযুক্ত দুই তরুণ, দুই পরিবারের কিছু আত্মীয় আর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনা তিরিশেক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাই। বছর বারোর মেয়েটি সে দিন বাড়ির কাছেই ঘাস কাটতে গিয়েছিল। অভিযোগ, তাকে চাদর চাপা দিয়ে জবরদস্তি ফাঁকা জায়গায় টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বছর সতেরোর উমর। এই ঘটনার বিচার চেয়ে নাবালিকার পরিবার উমরের বিরুদ্ধে স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে নালিশ জানায়। পরের দিন অভিযুক্তের উঠোনে সালিশি সভা বসে।
পাক-পঞ্জাব প্রদেশের রাজপুর গ্রামে একই উঠোনের চারপাশ ঘিরে ওই দুই পরিবারের বাস। শুধু প্রতিবেশী নয়, সম্পর্কে ওরা একে অপরের আত্মীয়। সে দিন সালিশি সভায় ঠিক হয়, ওই উঠোনেই সকলের সামনে অভিযুক্তের ১৬ বছরের বোনকে ধর্ষণ করবে নির্যাতিতা কিশোরীর দাদা আসফাক। সেই নিদান মেনে ১৮ জুলাই দুই পরিবারের বাবা-মা, আত্মীয়, গ্রামের মোড়লদের সাক্ষী রেখে আসফাক সেই ‘দায়িত্ব’ পালন করেছে বলে জানায় উমরের পরিবার।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে দুই জঙ্গি সংগঠনের টানাপড়েন
অভিযুক্ত উমরের পরিবার অবশ্য প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সূত্রের খবর, ছেলের বিরুদ্ধে যাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো না হয়, তার জন্য পঞ্চায়েতের বিধান মেনে নিয়ে উমরের মা নিজের বিবাহিত দুই মেয়েকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছিলেন। মোড়লেরা তা আমল দেননি। তাঁদের মতে, নাবালিকা ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি একমাত্র নাবালিকা ধর্ষণই।
২০০২ সালে একই জেলায় এমনই এক পঞ্চায়েতি বিধানের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। বিবাহিত মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে অভিযুক্তের বোনকেই গণধর্ষণের সাজা শুনিয়েছিল গ্রামের মোড়লেরা। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি অভিযুক্তের পরিবার। সেই নির্যাতিতা তরুণী মুখতার মাই পরে বিশ্ব জুড়ে নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন। তবে এ দিনের ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল ১৪ বছর পরেও পরিস্থিতিটা বদলায়নি। এখনও পাকিস্তানের বহু গ্রামীণ এলাকায় মানুষ বিচারের জন্য পুলিশ-প্রশাসনের বদলে পঞ্চায়েতের উপরেই ভরসা রাখেন।