অভিনব: জনসভায় ব্যস্ত আসিফ। —ফাইল চিত্র।
মঞ্চে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে নেতা। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলেছে চটকদার গান। ভিড় থেকে ভেসে আসছে মানুষের উল্লাস। ডিজে-র গানের মাঝেমাঝে চলছে ভোটের প্রচার। গত কয়েকটা মাস পাকিস্তান তাই কার্যত ‘ভোট উৎসব’-এ মেতে ছিল।
ভোট এলেই নেতাদের প্রতিশ্রুতির বন্যা। ক্ষমতায় এলে ‘এই হবে, সেই হবে’। আর ভোট ফুরোলেই ভোঁ ভাঁ। তার উপর আবার জঙ্গিদের চোখ-রাঙানি। এত কিছু উপেক্ষা করে ভোটের মুখে জনসভাগুলোতে কে আর পা দেয়! ভিড় টানতে তাই অভিনব পন্থা নিয়েছেন পাক নেতারা।
দিন কয়েক আগেই যেমন শাহবাজ় শরিফের সভাতে আছড়ে পড়েছিল ভিড়। সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নমান খান। কানফাটানো গানে নাচতে নাচতে বললেন, ‘‘দারুণ আনন্দ করছি। নওয়াজ় শরিফের মিছিলেও ভাল গান বাজানো হত।’’ শাহবাজ়ের দাদা নওয়াজ় শরিফ এখন জেলে। কারাগারের ভিতর থেকে চাঙ্গা করে গিয়েছেন পিএমএল-এন সমর্থকদের।
লোক টানার এই ফর্মুলা বেশি পুরনো নয়। আবিষ্কার করেছিলেন লাহৌরের বাসিন্দা আসিফ বাট। ‘ডিজে বাট’ নামেই তাঁর পরিচিতি বেশি। আগে বিয়েবাড়িগুলোতে ডিজে বাজাতেন। ২০১১ সালে তাঁকে চোখে পড়ে যায় ইমরান খানের। সেই শুরু।
আসিফ বলেন, ‘‘ইমরান খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টা আয়ত্ত করেছেন। গানের মাঝে ঠিক কখন কথা বলতে হবে, আর কখন থামতে হবে, সেটা জানেন।’’ ইমরানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ’ (পিটিআই)-এর সঙ্গে আসিফ বাটের ‘জোট’ দারুণ হিট হয়েছিল ২০১৩ সালের নির্বাচনে। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়। ভোটের ফল তেমন নজর কাড়েনি সে বার, কিন্তু সে অন্য কথা। এ বারের ভোটে কিন্তু ইমরানই এগিয়ে।
ভোটের প্রচারে গানের ব্যবহার অবশ্য পাকিস্তানের বহু পুরনো রীতি। আশির দশকে পপ মিউজ়িকের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গেই ভোটের স্লোগানে মিশেছে গানের সুর। কিন্তু ডিজে-র ছোঁয়া লেগেছে আসিফ বাটের হাত ধরেই।
আসিফের সাফল্যের মন্ত্রও খুব সহজ। ভিড়ের জন্য গান বাজান তিনি। কেমন মানুষ, তাঁদের কেমন পছন্দ, সেই অনুযায়ী গান বেছে নেন। যেমন, পাকিস্তানের পঞ্জাবে আসিফের পছন্দ ভাংড়া, উত্তর-পশ্চিমের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে লোকগীতি, শহরাঞ্চলে পপ গান।
আসিফের হাত ধরে ইমরানের দল সাফল্য পেতেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও একই পথে হাঁটছেন।
তবে মহম্মদ আলি নামে এক পিটিআই কর্মীই যেমন বলছেন, ‘‘ভিড়ের সবাই দলের সমর্থক নন। অনেকেই ডিজে শুনতে আসেন। গানগুলো বেশ ভাল।’’