বোমাতঙ্ক: এসেছে বম্ব স্কোয়াড। ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে সিএনএনের দফতর। বুধবার নিউ ইয়র্কে। এপি
বিস্ফোরক-ভরা একটার পর একটা প্যাকেট উদ্ধারের খবর আসছে তখন। কোনওটা পাঠানো হচ্ছিল বিল এবং হিলারি ক্লিন্টনের ঠিকানায়, কোনওটায় বারাক ওবামার নাম লেখা। নিউ ইয়র্কে মার্কিন চ্যানেল সিএনএন-এর দফতর খালি করে দেওয়া হল দ্রুত। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের প্যাকেটে লেখা রয়েছে সিআইএ-র প্রাক্তন ডিরেক্টর জন ব্রেনানের নাম। সন্দেহজনক প্যাকেট পাওয়া গেল নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর দফতরেও।
বুধবার সকাল থেকে আচমকা এই আতঙ্ক আর তোলপাড়ের পরে হলিউডের দেশে ভেসে উঠল বলিউডি ছবিটার নাম— ‘আ ওয়েডনেসডে’। যে ছবিতে মুম্বই শহরের পাঁচটা আলাদা-আলাদা জায়গায় বোমা রাখার কথা বলে চার জন জঙ্গিকে নিজের হেফাজতে চেয়েছিলেন এক ছাপোষা প্রৌঢ়।
আর আমেরিকায় বুধবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে বিস্ফোরক-ভরা অথবা সন্দেহজনক অন্তত সাতটি প্যাকেট উদ্ধার হয়েছে। এগুলির অধিকাংশই পাঠানো হচ্ছিল ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকদের কাছে। ওবামা এবং ক্লিন্টনকে পাঠানো প্যাকেট দু’টি অবশ্য গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই আটক হয়ে গিয়েছিল। ওই প্যাকেটে মিলেছে পাইপ-বোমা। ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্বেও রয়েছে সিক্রেট সার্ভিস। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘‘প্যাকেটে ছিল বিস্ফোরক পাউডার এবং বোমার অংশ। ডিটোনেটরের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে সেগুলিকে।’’
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে চাপাকুয়া-য় থাকেন বিল-হিলারি। টুইট করে এফবিআই জানায়, ক্লিন্টনদের বাসভবন সংলগ্ন এলাকাতেই মঙ্গলবার রাতে প্যাকেটটি পাওয়া যায়। প্রাপক হিসেবে প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারির নামই লেখা ছিল তাতে। ওবামাকে পাঠানো প্যাকেটটি ধরা পড়ে আজ সকালে, ওয়াশিংটনে। তার একটু পরেই আতঙ্ক ছড়ায় সিএনএনের নিউ ইয়র্কের অফিস-বাড়ি, টাইম ওয়ার্নার সেন্টারে। ম্যানহাটনের রাস্তায় নেমে আসেন কর্মী-সাংবাদিকেরা। একই এলাকায় সংবাদপত্র ‘সান দিয়েগো ট্রিবিউন’-এর অফিসের বাইরেও পাওয়া যায় একই রকম প্যাকেট।
সময় যত গড়ায়, একই খবরের পুনরাবৃত্তি। মার্কিন কংগ্রেসে ক্যালিফর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ম্যাক্সিন ওয়াটার্সের ঠিকানায় পাঠানো সন্দেহজনক প্যাকেটটি ধরা পড়ে মেরিল্যান্ডে। কিন্তু ফ্লরিডায় তাঁর দলীয় সতীর্থ তথা কংগ্রেস সদস্য ডেবি ওয়াসারম্যান শুলৎসের দফতরে ডাকযোগে পৌঁছে যায় প্যাকেট। তড়িঘড়ি খালি করা হয় অফিসটি।
ডাকযোগে পাঠানো বিস্ফোরক উদ্ধার অবশ্য শুরু হয়েছিল গত সোমবার থেকে। মার্কিন শিল্পপতি জর্জ সোরোসের বাড়ির চিঠির বাক্স থেকে উদ্ধার হয়েছিল সন্দেহজনক পার্সেল। তার ভেতর থেকে বেরোয় ৬ ইঞ্চি লম্বা পাইপের মধ্যে ঠাসা বিস্ফোরক পাউডার। একই জিনিস পেয়েছেন ওবামা-ক্লিন্টনরা। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, এই কারণেই সন্দেহ করা হচ্ছে, প্যাকেটগুলির প্রেরক একই। ক্লিন্টন-ওবামার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্যতম আর্থিক সহায়ক হিসেবেই পরিচিত সোরোস। ফলে আক্রোশে কেউ এই কাণ্ড ঘটাল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
দুই প্রেসিডেন্টের পরিবারের তরফেই কোনও মন্তব্য করা তবে গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘‘এই ধরনের কাপুরুষদের বিরুদ্ধে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’