সবুজের সংসার: বৃক্ষশূন্য জমিকে (বাঁ দিকে) জঙ্গলে পরিণত করেছেন ব্রাজিলের চিত্রসাংবাদিক সেবাস্টিয়ো রিবেইরো সালগাদো।
চোখের সামনে এলাকাটা একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছিলেন। ছোটবেলা থেকে ১৭৫৪ একর জমি জুড়ে দেখে এসেছেন সবুজের সংসার। তার এক পাশে তাঁদেরই বাড়ির গরু-বাছুর চরে বেড়াত। ব্রাজিলের মিনে জ়েরাইস অঞ্চলে এইমোরেস-এর সেই এলাকা সুখের দিন পেরিয়ে একটা সময়ে গাছ হারাতে হারাতে খটখটে জমিতে পরিণত হয়েছিল। এখানকার বাসিন্দা এবং পেশায় চিত্রসাংবাদিক সেবাস্টিয়ো রিবেইরো সালগাদো পণ করেছিলেন, ওই জমিকে আগের হালে ফিরিয়ে ছাড়বেন।
দীর্ঘ কুড়ি বছরের চেষ্টায় তাঁর স্বপ্ন সফল হয়েছে। ওই এলাকা জুড়ে এখন বৃষ্টি-অরণ্য হাতছানি দেয়। কুড়ি লক্ষ গাছ ওই জমিতে ‘ফিরিয়ে’ দিয়েছেন তিনি। সালগাদো তাঁর স্ত্রী লিলিয়ার সঙ্গে মুগ্ধ চোখে এখন দেখেন সে দৃশ্য।
কর্মসূত্রে বহু দিন আগে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। নিজের জায়গায় ফেরত আসা বছর তিরিশ আগে। উপ-ক্রান্তীয় সেই বৃষ্টি অরণ্যে তখন মাত্র ০.৫ শতাংশ গাছ বেঁচে। ব্রিটেনের একটি পত্রিকাকে সালগাদো বলেছেন, ‘‘জমিটা তো মরেই গিয়েছিল। সেই দশা দেখে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি! মনে হচ্ছিল সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ ১৯৯৮ সালে স্ত্রীর সঙ্গে মিলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেন সালগাদো। জমিকে গাছ দিয়ে বাঁচানোই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
১৭৫৪ একর জমির মধ্যে ১৫০২ একরের বৃষ্টি অরণ্য এখন ১৭২টি প্রজাতির পাখি, ৩৩টি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ১৫ প্রজাতির উভচর ও সরীসৃপের ঠিকানা।
ব্রাজিলের চিত্রসাংবাদিক সেবাস্টিয়ো রিবেইরো সালগাদো ও স্ত্রী লিলিয়া। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
সালগাদো বিশ্বাস করেন, নিজেদের গ্রহকে বাঁচাতে এর চেয়ে ভাল পথ আর হয় না। বিশ্ব যে ভাবে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তা রুখতে অরণ্যের বিস্ফোরণে ভরসা রাখতে চান তিনি। কারণ অরণ্যের শক্তি অসীম, মনে করেন সালগাদো। তিনি বলেছেন, ‘‘বৃক্ষশূন্য এলাকায় ফের গাছ লাগালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গাছ মরে গেলে বা নষ্ট হলে আমাদের ফের গাছ পোঁতা উচিত। দেশীয় গাছে ভর্তি অরণ্য প্রয়োজন। একই এলাকা থেকে বীজ বেশি করে জোগাড় করুন। তা না হলে সাপ আর উইপোকা আসবে না। জঙ্গল তৈরি করে তাতে কেউ না এলে সে জঙ্গলে প্রাণ থাকে না। অরণ্য চুপ হয়ে যায়।’’
গত কালই রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, এ গ্রহের বাসিন্দা ৮০ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে ১০ লক্ষ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। আর এর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী মানুষই। সেখানে অন্য পথে হেঁটে নজির তৈরি করলেন ব্রাজিলের সালগাদো।