Bangladesh Election 2024

বেজে চলেছে প্রচার-সঙ্গীত ‘নৌকা, নৌকা’, চার দিকে উড়ছে সবুজ আবির, কুর্শিতে ফিরছেন হাসিনা

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে অংশ নেয়নি। প্রতিপক্ষ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নামসর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দল। হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ দফায় সরকার গঠন ছিল প্রত্যাশিত।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:১৯
Share:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

উড়ছে সবুজ আবির, সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে উদ্দাম নাচ। সুরেলা ধাতব কণ্ঠে বেজে চলেছে প্রচার-সঙ্গীত, ‘নৌকা, নৌকা’।

Advertisement

প্রথমে হঠাৎ শুনে মনে হতে পারে— ‘মওকা, মওকা’! মওকাই বটে।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে অংশ নেয়নি। প্রতিপক্ষ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নামসর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সুতরাং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যে টানা চতুর্থ দফায় সরকার গঠন করবে, তা কার্যত ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। রবিবার সারা দিন ভোটের পরে বিকেল ৪টে থেকে বুথে বুথে ব্যালট গণনা যত এগিয়েছে, সেই ছবিই স্পষ্ট হয়েছে। ইগল, ট্রাক বা কাঁচি প্রতীক নিয়ে যেখানে যেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্রেরা, তাঁদেরও অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতা। সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগেই ঘোষণা করেছেন জয়ীদের জন্য দলের দরজা খোলা থাকবে।

Advertisement

বিএনপি, জামাতে ইসলামি এবং ‘সমমনা’ দলগুলি ভোট বয়কট করে শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেওয়ায় ফলাফলকে ছাপিয়ে নজরের কেন্দ্রে চলে এসেছিল ভোটের হার। বিরোধীদের বয়কটের ডাক অগ্রাহ্য করে প্রতিদন্দ্বিতা আঁচ না-থাকা একটা নির্বাচনে কত মানুষকে ভোটকেন্দ্রে টানতে পারা যাবে— সেটাই ছিল হাসিনার দলের চ্যালেঞ্জ। দিনের শেষে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, সারাদেশে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে— যা ডিস্টিংশন নিয়ে পরীক্ষায় পাশ বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগ। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের পর্যবেক্ষকরা এ দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখে ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন— যার ফলে আরও স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন শেখ হাসিনা।

ভোটে জয়ের চেয়েও ভোটের হার কেন বেশি মাথাব্যথা ছিল আওয়ামী লীগের কাছে? কারণ, এই হার খুব কম হলে এক দিকে বিএনপি-জামাত যেমন সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন বলার সুযোগ পেয়ে যেত, তেমনই আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি শক্তি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাপে ফেলতে পারত হাসিনা সরকারকে। ৪০ শতাংশ ভোটের হার তাই জয়ের থেকে এতটুকু কম গুরুত্বপূর্ণ নয় তাদের কাছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাই বলেছেন, “ভোটারেরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেও জিতিয়েছেন। আর বয়কট করেছেন ভোট বয়কটের ডাক দেওয়া বিএনপিকে।”

গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়া) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট। তাঁর সব চেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল কালাম ৪৬০টি ভোট পেয়েছেন। দু’দিন আগে টুঙ্গিপাড়ায় স্থানীয় এক যুবকের কাছে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থীদের নাম ও ডেরার খোঁজ করায়, তাঁর তো হাসিই থামে না। পরে জানালেন, সকলেই তো পরিচিতমুখ, দেখুন হাসিনার হয়েই প্রচার করেছেন কোথাও!

প্রচারে ‘তাঁর’ খামখেয়ালি আচরণে দলের কর্মী থেকে ভোটারেরা বিরক্ত। ভোটের দিনেও এক অল্পবয়সি ভক্ত বেশি কাছাকাছি চলে আসায় সপাটে থাপ্পড় কষিয়েছেন, যার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে জিতেছেন সেই ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান। তিনি পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। ৫৯৯৩টি ভোট পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন নড়াইল-২ আসনে নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরফী বিন মোর্ত্তজা।নড়াইলের লোহাগড়া মোড়ের চায়ের দোকানি ফারুক আলির কথায়, “শুধু খেলোয়াড় নয়, মাশরফি এক জন মানুষের মতো মানুষ। কাউকে অশ্রদ্ধা দেখায় না। বিপদে-আপদেপাশে থাকে।”

প্রায় একই কথা আরও এক জনের সম্পর্কে বলেন উত্তরের সুদূর নীলফামারিতে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করা ঢাকার এক বাসিন্দা সাইফুল। তাঁর কথায়, “নুর ভাই (আসাদুজ্জামান নুর)-কে ভোটটা না দিলে অবিচার হবে, তা সে যত কষ্টই হোক। বিএনপি-র লোকেরাও তাঁকে ভোট দেবে।”

বিপুল ভোটে জিতেছেন ‘নুর ভাই’, বর্ষীয়ান তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু-ও।

রবিবার কোথাও কোথাও অনিয়মের অভিযোগ যে হয়নি, তা নয়। ১৩টি বুথের ভোট বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিপদ খারিজ করেছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষও ঘটেছে। মুন্সিগঞ্জে এক জন প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু এই সব কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে গোটা বাংলাদেশেই মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়েছেন। নতুন করে কোনও অশান্তি যাতে না হয়, কর্মীদের তাই বিজয়-মিছিল করতে বারণ করেছেন শেখ হাসিনা।

এ বার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার তোড়জোড় শুরু করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। হতে পারে, সেই চ্যালেঞ্জ দেশের অর্থনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন