তখনও চেন দিয়ে বাঁধা রয়েছেন তরুণী। ছবি: সংগ্রহ
ক্ষীণ একটা গোঙানির শব্দ কানে এসেছিল বটে! তবে এত ক্ষীণ যে প্রথমে খুব একটা গুরুত্ব দেননি তদন্তকারী অফিসারেরা। আর এক বার...আরও এক বার সেই একই গোঙানির শব্দ! আওয়াজটা আসছিল কাছেই রাখা একটা বড় ধাতব কন্টেনারের ভিতর থেকে। কন্টেনারের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেই তাজ্জব হয়ে যান দুঁদে অফিসারেরা। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে চোখ সইতেই দেখা গেল গলায় চেন দিয়ে কুকুরের মতো কিছু একটা যেন বাঁধা রয়েছে! তবে গোঙানির আওয়াজটা ঠিক কুকুরের নয়। আর তখনই টর্চের আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে একটা ম্লান মুখ। মেঝেয় পাতা মাদুরের উপরে হাঁটু ভাঁজ করে বসে রয়েছেন এক তরুণী! দেওয়ালের সঙ্গে চেন দিয়ে তাঁর গলাটা শক্ত করে বাঁধা। খুব একটা নড়াচড়ারও উপায় নেই। গত বছরের নভেম্বরে দক্ষিণ ক্যারোলিনার একটি জঙ্গলের ফার্ম হাউস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ওই তরুণীকে। নাম কালা ব্রাউন। এই খবর সামনে আসার পরই তখন বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি তাঁর সেই উদ্ধারের ভিডিও সামনে আনল পুলিশ।
আরও পড়ুন: বলি তারকাদের সঙ্গে দেখা করতে সীমান্ত পেরলো পাক যুবক!
ওই ভিডিওয় দেখা যায়, বিশালাকার ধাতব সেই কন্টেনার খোলার চেষ্টা করছেন কয়েক জন অফিসার। শেষে তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন চার জন। ভিতরটা খুব অন্ধকার। তাই প্রথমে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা জিনিস। বাসি খাবার এমনকী কিছু বইও রাখা ছিল। আরও কিছুটা এগোতেই তাঁদের মধ্যে এক অফিসার চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘এখানে একটা তরুণী... এখানে একটা তরুণী।’’ দেখা যায় কালো শার্ট আর ট্রাউজার পরে মেঝেতে প্রায় নিস্তেজ অবস্থায় বসে রয়েছেন এক তরুণী। চোখে চশমা। খুব কষ্ট করে পুলিশ কর্মীদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন এক বার। ক্ষীণ কণ্ঠে সাহায্যের আর্তি জানালেন। তার পর আবার মাথা নিচু করে পড়ে রইলেন। তাঁর গলায় একটা বেল্ট লাগানো ছিল, আর সেই বেল্টের সঙ্গেই চেন দিয়ে কন্টেনারের দেওয়ালে আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। চেন কেটে তাঁকে উদ্ধার করেন অফিসারেরা।
দেখুন ভিডিও:
গত বছরের অগস্ট মাস থেকে ওই তরুণী নিখোঁজ ছিলেন। ওই একই সময় থেকে সন্ধান মিলছিল না চার্লস ডেভিড কারভার নামে তাঁর এক বন্ধুরও। পুলিশের কাছে ওই তরুণী জানিয়েছেন, বন্ধুর সঙ্গে কন্টেনার পরিষ্কারের কাজ নিয়ে ওই ফার্মে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, ওই ফার্মের মালিক টেড কোহেপ তাঁদের আটকে রাখেন। কোনও কারণ ছাড়াই কিছু দিন পর প্রথমে বন্ধু কারভারকে গুলি করে খুন করে কোহেপ। তার পর ওই তরুণীকে কন্টেনারের মধ্যে আটকে রাখে। এ ভাবেই দু’মাস ছিলেন তিনি। কন্টেনারটির কোনও জানলা ছিল না। দিনে দু’বার মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি তালা খুলে ভিতরে ঢুকে খাবার আর জল দিত মাত্র। তাঁর সঙ্গেই ওই কন্টেনারে নাকি আরও চার জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে এক এক করে তাঁদেরকেও খুন করে ওই এলাকাতেই পুঁতে রাখা হয়। তাঁরও হয়তো এ রকমই পরিণতি হত বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁদের খোঁজ করতে করতে ফার্মে গিয়ে উপস্থিত হয় পুলিশ। ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার হন টেড কোহেপ। পুলিশ জানায়, কোহেপ এক জন সিরিয়াল কিলার। জেরায় এর আগেও অনেককে খুন করার কথা স্বীকার করেছে সে। ৪৬ বছরের কোহেপের ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।
ভিডিও ইউটিউব থেকে নেওয়া।