বিয়ের আসর মাটি থেকে ৩৬ হাজার ফুট উপরে। বর-কনে দু’জনেই বিমানকর্মী। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাই চার হাত এক হল বিমানেই। গতকাল সান্তিয়াগো থেকে উত্তরাঞ্চলীয় ইকিক শহরে যাওয়ার পথে ঐতিহাসিক এই বিয়ের সাক্ষী থাকলেন পোপ ফ্রান্সিস।
শুধুই কি সাক্ষী! বলা ভাল, তিনি নিজেই দু’পক্ষের কর্তা হয়ে এগিয়ে এলেন। সটান প্রস্তাব দিলেন— ‘‘আপনারা চাইলে এখানেও বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে!’’ যা শুনে প্রথমটায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন কনে প্রো়ডেস্ট রুইজ (৩৯) আর বর কার্লোস সিউফার্দি এলোরিগা (৪১)। ঘোর কাটে খানিক পরে। মনে পড়ে যায়, ২০১০-র প্রবল ভূমিকম্পে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর গির্জা ভেঙে পড়ায় সে বার বিয়েটা তো কোনও মতেই শেষ করতে হয়েছিল। পোপের প্রস্তাবে তাই লাজুক হেসেই রাজি হয়ে যান যুগলে। ক্যাথলিক রীতি মেনেই তাঁদের বিয়ের পাঠ পড়ান পোপ। হাতে লেখা বিয়ের শুভেচ্ছাবার্তাও তুলে দেন। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন এয়ারলাইন্সের এক শীর্ষকর্তা। ‘ঐতিহাসিক’ ওই বিয়ের আসরে থাকতে পেরে তিনিও গর্বিত। আর দুই সন্তানের বাবা-মা ওই ‘নবদম্পতি’ যেন তখনও হাওয়ায় ভাসছেন! ভ্যাটিকানের মুখপাত্র পরে জানান, ‘‘এমন বিয়ে বৈধই।’’
পোপ ফ্রান্সিস বরাবর এমনই ব্যতিক্রমী— বলছেন তাঁর ভক্তেরা। তখনও তাঁরা জানতেন না যে, চমক অপেক্ষা করে রয়েছে ইকিক শহরেও। আজকের টাটকা ঘটনা। একটি সমাবেশের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন পোপ। মাথার উপর স্বচ্ছ ছাদ রয়েছে, কিন্তু চারদিক খোলা গাড়ি। রাস্তার দু’ধারে সারিবদ্ধ ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে চলেছেন বছর বছর একাশির পোপ। হঠাৎ ছন্দপতন। টিভি ক্যামেরা দিয়ে গোটা দুনিয়া দেখল— ঘোড়সওয়ার এক মহিলাপুলিশ কর্মী আচমকা ছিটকে পড়লেন ঘোড়া থেকে। সরাসরি মাটিতে। পোপের গাড়ি তখন সবে কয়েক হাত এগিয়েছে। তখনই গাড়ি থামাতে বলে, পোপ নিজেই তরতর করে নেমে এলেন গাড়ির পিছনের অংশ দিয়ে। অপদস্থ ওই পুলিশকর্মীকে বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাতও। ততক্ষণে এসে গিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। পোপ ফের নিজের গাড়িতে উঠে এলেন। তাঁর চোখে-মুখে তখনও উদ্বেগ স্পষ্ট।
ভিডিওটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোপকে ধন্য-ধন্যও করছেন একাংশ। কূটনীতিকরা অবশ্য অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাতে চাইছেন। গির্জায় শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগক কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে জ্বলছে চিলি। বস্টনের একটি গবেষণা সংস্থা সম্প্রতি যাজক ও গির্জার উচ্চপদস্থ আধিকারিক মিলিয়ে চিলের মোট ৮০ জনের বিরুদ্ধে শিশুদের উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছে। যার জেরে পোপ চিলিতে পা রাখার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে গির্জা পোড়ানো। মঙ্গলবার সান্তিয়াগোর একটি পার্কে সমাবেশ চলাকালীন পোপকেও বিক্ষোকভের মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে পর্যন্ত মারমুখী হয়ে মাঠে নামতে হয়। এর পরেও আজ পোপ যে ভাবে নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করেই সটান রাস্তায় নেমে গেলেন, তাতেই চোখ কপালে উঠেছে একাংশের।