শিশুদের বাঁচায় না কেন ঈশ্বর, প্রশ্ন খুদের

বারো বছরের কিশোরীর প্রশ্নে হতবাক পোপ! রবিবার ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় পোপ ফ্রান্সিসের বক্তৃতামঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির প্রশ্ন, “আমার মতো মেয়েদের কেন দেহ ব্যবসায় নামানো হয়? ঈশ্বর কেন এটা হতে দিচ্ছে? আমরা তো কোনও পাপ করিনি!” খুদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি পোপ। তবে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁকে। তৈরি করে আনা বক্তৃতার খসড়া পাশে সরিয়ে রেখে বলেছেন, “আমরা যখন এ ভাবে কাঁদতে পারব, শুধু তখনই তোমার প্রশ্নের কাছাকাছি পৌঁছব। বাস্তবের কিছু ঘটনা আমরা তখনই দেখতে পাই, যখন চোখের জলে দৃষ্টি পরিষ্কার হয়।”

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ম্যানিলা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৭
Share:

ছোটদের সঙ্গে পোপ। ম্যানিলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ছবি: রয়টার্স।

বারো বছরের কিশোরীর প্রশ্নে হতবাক পোপ!

Advertisement

রবিবার ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় পোপ ফ্রান্সিসের বক্তৃতামঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির প্রশ্ন, “আমার মতো মেয়েদের কেন দেহ ব্যবসায় নামানো হয়? ঈশ্বর কেন এটা হতে দিচ্ছে? আমরা তো কোনও পাপ করিনি!”

খুদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি পোপ। তবে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁকে। তৈরি করে আনা বক্তৃতার খসড়া পাশে সরিয়ে রেখে বলেছেন, “আমরা যখন এ ভাবে কাঁদতে পারব, শুধু তখনই তোমার প্রশ্নের কাছাকাছি পৌঁছব। বাস্তবের কিছু ঘটনা আমরা তখনই দেখতে পাই, যখন চোখের জলে দৃষ্টি পরিষ্কার হয়।” গ্লাইজেলা পালোমার নামে ওই কিশোরীকে বছর খানেক আগে রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দেন গির্জার স্বেচ্ছ্বাসেবীরা। আজ, পোপের সঙ্গে সভামঞ্চে কথা বলতে ওঠে গির্জায় আশ্রয়ে থাকা চার পথশিশু। তাদের সঙ্গেই ছিল গ্লাইজেলা।

Advertisement

গ্লাইজেলা জানিয়েছে, তাদের মতো অনেক বাচ্চাকেই মাদক বা দেহ ব্যবসার মতো ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয়। ইংরেজি ছেড়ে খুদের সঙ্গে স্প্যানিশ ভাষাতেই কথা বলেন পোপ। বলেন, “একমাত্র এই মেয়েটিই এমন একটা প্রশ্ন করেছে, যার কোনও জবাব দেওয়া যায় না। ও নিজের প্রশ্নটা ভাষায় প্রকাশও করতে পারেনি, কান্নাতেই কথা বলেছে।”

এর পর ম্যানিলার ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েই পোপ বলেন, “আমাদের আজকের সমাজে মেয়েদের অনেক কথা বলার আছে। অনেক সময়েই আমরা বড্ড পুরুষতান্ত্রিক হয়ে থাকি।” তাঁর কথায় বার বার উঠে আসে মহিলাদের প্রসঙ্গ। তাঁদের বাক্স্বাধীনতা, তাঁদের জীবনদর্শনের কথা বলতে বলতে পোপ মনে করিয়ে দেন, তাঁর সভামঞ্চ ঘিরে থাকা মানুষের ভিড়েও মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম! ধর্মগুরুর কথায় ভিড়ের মধ্যে হাসির রোল ওঠে। পোপ জানান, “মহিলারা অন্য ভাবে দুনিয়াটাকে দেখতে পারেন। মহিলারাই এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন, যা পুরুষদের বোধগম্যই হয় না অনেক সময়।” পোপের কথায় হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাপ্রাঙ্গণ। তিনি আরও বলেন, চার জন পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে গ্লাইজেলা যে প্রশ্ন তুলতে পেরেছে, তা আর কেউ পারেনি। কেউ প্রশ্ন করেনি, ঈশ্বর কেন শিশুদের বাবা-মার থেকে ব্রাত্য করেন?

পোপ মহিলাদের অধিকার এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করলেও ক্যাথলিক গির্জা এখনও মহিলাদের যাজক হওয়ার অধিকার দেয় না। এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি পোপ। জানিয়েছেন, তিনি চাইছেন, ভ্যাটিক্যানে যাতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা কর্মী এবং সন্ন্যাসিনীকে নিয়োগ করা হয়।

তাঁর বক্তৃতা শুনতে এত মানুষের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা যে কম, তা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে ভাষণ শেষ করেন পোপ। তবে ম্যানিলার কাছে তিনি একটি প্রতিশ্রুতিও চেয়েছেন। বলেছেন, “পরের পোপ এখানে এসে যেন ভিড়ের মধ্যে আরও বেশি মহিলাদের দেখতে পান!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন