International News

প্রেসিডেন্ট নরম, পার্টি গরম: ভারতের জন্য নতুন দ্বিমুখী নীতি নিচ্ছে চিন

‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এ (ওবিওআর) ভারতকে সক্রিয় ভাবে সামিল করতে নরম-গরম কূটনীতির পথে চিন। এক দিকে চিনের কমিউনিস্ট সরকার ভারতের উদ্বেগ সম্পর্কে অত্যন্ত সৌজন্যমূলক ভাষায় কথা বলতে শুরু করল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ১৭:০৯
Share:

চিনা সংবাদপত্র বলছে, ভারত ওবিওআর-এ যোগ না দিলেও কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু ভারতকে ওই কর্মসূচিতে পাওয়ার জন্যই যে বেজিং ভারত সম্পর্কে এত রকম কথা বলছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের সংশয় নেই। —ফাইল চিত্র।

‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এ (ওবিওআর) ভারতকে সক্রিয় ভাবে সামিল করতে নরম-গরম কূটনীতির পথে চিন। এক দিকে চিনের কমিউনিস্ট সরকার ভারতের উদ্বেগ সম্পর্কে অত্যন্ত সৌজন্যমূলক ভাষায় কথা বলতে শুরু করল। অন্য দিকে, চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের প্রতি ভারতের অবস্থানের সমালোচনা শুরু করল। প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং রবিবার নিজের ভাষণে ভারতের নাম না করেও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যে সব কারণ দেখিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি-র নির্মাণ নিয়ে ভারত আপত্তি তুলেছে, সেই সব কারণের প্রতি বেজিং সংবেদনশীল। কিন্তু সোমবার ‘গ্লোবাল টাইমসে’র মাধ্যমে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বার্তা, ভারত যদি এখনই বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ না দেয়, তা হলে ভবিষ্যতে ভারতকেই আফসোস করতে হবে।

Advertisement

ঠিক কী লেখা হয়েছে গ্লোবাল টাইমসে?

‘‘চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই ভারত প্রকাশ্যে সে কর্মসূচি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।...’’

Advertisement

‘‘চিন এমন কোনও দেশকেই বেল্ট অ্যান্ড রোডে যোগ দিতে চাপ দেবে না, যে দেশ এই কর্মসূচির বিষয়ে খুবই সন্দিহান এবং শঙ্কিত। কাশ্মীর বিতর্কের বিষয়ে চিনের অবস্থান এত দিন যা ছিল, সিপিইসি-র কারণে সেই অবস্থান বদলে যাবে না, এ কথা বার বার বলা সত্ত্বেও ভারত যে বেল্ট অ্যান্ড রোডের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানে অনড়, তা দুঃখজনক ঠিকই, কিন্তু এতে (চিনের) কোনও সমস্যা হবে না।’’

বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের শিখর সম্মলনে অনেক দেশকেই হাজির করতে পেরেছেন চিনফিং। রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তিও সামিল হয়েছে। কিন্তু চিন চায়, ভারতও এই প্রকল্পের সক্রিয় অংশীদার হোক। ছবি: এএফপি।

গ্লোবাল টাইমস চিনের কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত এমনই একটি সংবাদপত্র, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে চিনের শাসকরা তাঁদের অবস্থান ব্যক্ত করে থাকেন। সংবাদপত্রটিতে যা লেখা হয়েছে, তার সার কথা হল— ভারত যদি অবিলম্বে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দেয় তা হলে ভাল। কিন্তু এখন যোগ না দিয়ে ভারত যদি ভবিষ্যতে কোনও সময় এই কর্মসূচিতে সামিল হওয়ার কথা ভাবে, তা হলে ভারতকে কোনও বড় ভূমিকা দেওয়া হবে না। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচিতে ভারতকে তখন ‘খুব ছোট’ ভূমিকা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:

ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি চিন শ্রদ্ধাশীল, নাম না করে বার্তা দিল বেজিং

ওবর-মঞ্চে নওয়াজের নিশানায় নয়াদিল্লিই

বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের দু’দিনের সম্মেলন আজ, সোমবার শেষ হচ্ছে। গতকাল, রবিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং নাম না করে ভারতকে সৌজন্যের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) কর্মসূচি সম্পর্কে ভারতের সংশয় দূর করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট চিনফিং বলেছিলেন, ‘‘সব দেশেরই উচিত পরস্পরের সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং আঞ্চলিক সংহতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখা, পরস্পরের বিকাশের পথ সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং পরস্পরের স্বার্থ ও উদ্বেগের খেয়াল রাখা।’’ কূটনৈতিক মহলের মতে, শনিবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক যে বিবৃতি দিয়েছিল, রবিবার তার প্রেক্ষিতেই প্রেসিডেন্ট চিনফিং ওই মন্তব্য করেছিলেন। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে মুখপাত্র গোপাল বাগলে শনিবার সন্ধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘কোনও দেশই এমন কোনও প্রকল্পকে মেনে নিতে পারে না, যে প্রকল্প সেই দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতি সংক্রান্ত মূল উদ্বেগকে অবজ্ঞা করে।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘ওবিওআর-এর ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প যে তথাকথিত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর, পাক অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে যাওয়া সেই করিডর সম্পর্কে ভারতের অবস্থান কী, তা আন্তর্জাতিক মহল ভাল ভাবেই জানে।’’ অর্থাৎ, বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলন শুরু হওয়ার আগের সন্ধ্যাতেই ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, পাক অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে যাওয়া সিপিইসি যে হেতু ওবিওআর-এর অঙ্গ, সে হেতু ভারত ওবিওআর-এ যোগ দিতে পারে না। ভারতের সেই অবস্থান সম্পর্কে চিনের সরকারি প্রতিক্রিয়া নরমই ছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি একটু সমালোচনার সুর শুনিয়ে বুঝিয়ে দিল, বেল্ট অ্যান্ড রোডে ভারতকে সামিল করতে চিন মিঠে এবং কড়া, দু’রকম কূটনীতিই ব্যবহার করবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা অবশ্য বলছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোডে ভারতকে পেতে চিন যে কতটা বদ্ধপরিকর, চিনের এই কৌশল থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন