প্যারিসের রাস্তায় সংবাদপত্র বিক্রি আলি আকবরের। ছবি: রয়টার্স।
টেলিভিশন আসার পর থেকে ফ্রান্সে সংবাদপত্র বিক্রিতে অনেকটাই ভাটা পড়ে। সময় যত এগিয়েছে, যুগ যত ‘ডিজিটাইসড’ হয়েছে, ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্রের চাহিদা ততই কমেছে। কিন্তু অতি আধুনিকতার যুগেও প্যারিসে সংবাদপত্র বিক্রি বাঁচিয়ে রেখেছেন এক জনই। তিনি আলি আকবর। প্যারিসে থাকলেও আদতে তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা। এ বার তাঁকেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘অরদ্রো নাসিয়নাল দ্যু মেরিত্’ (ন্যাশনাল অর্ডার অফ মেরিট) দেবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
গত ৫০ বছর ধরে আলি প্যারিসের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। হাসিমুখে এবং কখনও কখনও কৌতুকবোধ মিশিয়ে পথচলতি মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন শার্লি এবদো, ল্য মঁদ-এর মতো জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলি। ছাপার অক্ষরের সংবাদপত্রের সঙ্গে আলির যেন আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। তাই সংবাদের ‘ডিজিটাইজেশন’ হলেও নিজের পেশাকে এক জায়গাতেই আটকে রেখেছেন। শুধুমাত্র ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্র বিক্রিকে ভালবেসেই ৫০ বছর ধরে অক্লান্ত ভাবে এই কাজ করে চলেছেন আলি।
১৯৭৩ সালে ফ্রান্সে চলে আসেন আলি। সংবাদপত্র বিক্রিকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। সুদূর পাকিস্তান থেকে পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে সংবাদপত্র বিক্রেতা হিসাবেই তাঁর পথ চলা শুরু হয়। শুধু বিক্রিই নয়, তার সঙ্গে বাড়তি হিসাবে পাঠকদের নিজের কৌতুকবোধ দিয়েও মাতিয়ে রাখতেন। আর এটাই ছিল সংবাদপত্র বিক্রির তাঁর নিজস্ব ধরন। প্রথমে শার্লি এবদোর মতো পত্রিকা বিক্রি করা শুরু করেন সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার আশপাশের এলাকার পড়ুয়াদের কাছে। টেলিভিশন আসার পর খবরের দুনিয়ায় দ্রুত পট বদলাতে শুরু করে। ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্রের জায়গা দখল করে নিতে শুরু করে টিভি। এর পরে আসে ইন্টারনেট। সংবাদপত্রের প্রভাব আরও কমতে থাকে। কিন্তু এত কিছুর পরেও দমে যাননি আলি। কারণ, তিনি সহজেই দমে যাওয়ার পাত্র নন। তাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তায় এখনও ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আলি। তাঁর কথায়, ‘‘হাতে সংবাদপত্র নিয়ে বিক্রি করার অনুভূতিই আলাদা। যা আমার কাছে অমূল্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ট্যাবলেটের মতো আধুনিক গ্যাজেট আমার পছন্দ নয়। আমি পড়তে ভালবাসি। তা সে যে ধরনেরই হোক। আসল আনন্দ বই পড়ায়। যা হাতে ধরে পড়া যাবে। স্ক্রিনে নয়।’’
আলি আরও বলেন, ‘‘সংবাদপত্র বিক্রি করার আমার নিজস্ব একটি ধরন আছে। আমি লোকজনকে মজার মজার কথা শোনাতে ভালবাসি। মানুষকে হাসাতে ভালবাসি। মানুষের অন্তরাত্মায় প্রবেশের চেষ্টা করি। আর তাই সংবাদপত্র তাঁদের হাতে তুলে দিতে আমার দারুণ লাগে।’’
কিন্তু এই ডিজিটাল যুগেও কী ভাবে এই পেশাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন? আলি বলেন, ‘‘আট ঘণ্টায় ২০টি ল্য মঁদ বিক্রি করি। লোকজন এখন আর ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্র কিনতে চান না।’’ কিন্তু তাতে কী! যত দিন শরীরে বল থাকবে, তত দিন এ ভাবেই সংবাদপত্র বিক্রি করে যাবেন প্যারিসের রাস্তায়।