রাজকুমারি ডায়ানার সঙ্গে হ্যারি।
বছর কুড়ি আগে জীবনটা ওলট পালট হয়ে যায় বারো বছরের ছেলেটার। সারা বিশ্ব টিভির পর্দায় দেখেছে, মায়ের কফিনের পিছনে হেঁটে চলেছে রাজপুত্র। কিন্তু সেই বিপর্যয়ের কতটা তাঁকে ছুঁয়েছিল, তিনি নিজেও জানেন না। ৩২-এ পৌঁছে এখন তিনি বলছেন, প্রায় খাদের মুখ থেকে লড়াই করে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।
১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট। ছবিশিকারীদের এড়াতে গিয়ে প্যারিসের এক সুড়ঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁর মা, রাজকুমারি ডায়ানা। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’দশক। এই দীর্ঘ সময়ের অনেকটা জুড়েই মাকে হারানোর যন্ত্রণা নিজের মধ্যেই বয়ে বেড়িয়েছেন ডায়ানার ছোট ছেলে হ্যারি। তাঁর কথায়, ‘‘সব আবেগ-অনুভূতি চেপে রেখে জীবন কাটাতাম।’’ দাদা উইলিয়াম অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি।
সম্প্রতি এক ব্রিটিশ দৈনিকে সাক্ষাৎকারে সেই দিনগুলোর কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন হ্যারি। বলেছেন, মাত্র চার বছর আগে কাউন্সেলিং শুরু করেন তিনি। তার আগের সময়টা ‘বিপুল বিপর্যয়ের’। সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি প্রচার অভিযানে যোগ দিয়েছেন তিনি, সঙ্গে দাদা উইলিয়াম এবং বৌদি কেট। হ্যারির মন্তব্য, ‘‘যখন অবসাদে ভুগতাম, তখন শুধু মনে হতো, বালিতে মাথা গুঁজে বসে থাকি। মায়ের কথা একদম ভাববই না। তাতে শুধুই দুঃখ। কোনও কিছুতেই দুঃখ কমত না। মা-ও ফিরে আসতেন না।’’
হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে এখন হ্যারির উপলব্ধি, ‘‘১২ বছরে মাকে হারানো এবং তার পরে আরও দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে সেই যন্ত্রণা চেপে রাখা! এ সবের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, আমার কাজেও পড়েছিল।’’ পত্রিকার কাছে হ্যারির স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ‘‘অনেক সময়েই পুরোপুরি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। শোক, মিথ্যে, ভ্রান্ত ধারণা— সব কিছু সব দিক থেকে যখন ধেয়ে আসে, তখন কিছু করার থাকে না। কুড়ি বছর ধরে সেই ভাবনা চেপে রেখেছিলাম। কী ভাবে যে তখন দিন কাটাতাম, জানি না।’’
এই অবসাদকে কখনওই নিজের কাজের বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি হ্যারি। মনের ভেতর কী চলছে, কাউকে বুুঝতেও দেননি। কিন্তু এতে আখেরে যে তাঁর নিজের কোনও লাভ হয়নি, সেটা এখন মানছেন হ্যারি। সাধারণ মানুষের চোখে নিজের ‘স্বাভাবিক’ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে গিয়ে ধ্বংসের আরও কাছাকাছি চলে যেতে হয়ে গিয়েছিল তাঁকে। হ্যারির মতে, ‘‘২০, ২৫ বা ২৮ বছরের কোনও সাধারণ ছেলে যেমন ভাবে ‘জীবনটা দারুণ’ মনে করে, আমি সে ভাবেই চলছিলাম।’’ তার পরে কিছু আলোচনায় হঠাৎ বুঝতে পারেন, শোকের পাহাড় জমে রয়েছে তাঁর ভিতরে। এই সময়ে বক্সিং তাঁকে সাহায্য করেছে অনেকটাই। তখন তিনি ২৮। নিজের ভিতর জমিয়ে রাখা ক্ষোভের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে বক্সিংই হয়ে ওঠে রক্ষাকর্তা।
এত দিন ধরে তাঁর এই লড়াইয়ের গল্প অনেক মানুষকে ভরসা দেবে বলে হ্যারির বিশ্বাস। তাই সব কথা খুলে বলতে এগিয়ে এসেছেন তিনি।