প্রধানমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ে তাইল্যান্ডের রাজকুমারী

প্রথা ভেঙে রাজনীতিতে পা দিলেন তাইল্যান্ডের রাজকুমারী! তা-ও পুরনো সমীকরণ ভুলে শত্রুপক্ষের সঙ্গে মিত্রতা করে। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্যাঙ্কক শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৮
Share:

রাজকুমারী উবোলরত্না

প্রথা ভেঙে রাজনীতিতে পা দিলেন তাইল্যান্ডের রাজকুমারী! তা-ও পুরনো সমীকরণ ভুলে শত্রুপক্ষের সঙ্গে মিত্রতা করে।

Advertisement

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টালমাটাল তাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এক দিকে, রাজপরিবার ঘনিষ্ট দেশের অভিজাত শ্রেণি। উল্টো দিকে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাবাত্রার অনুগত গ্রামীণ সম্প্রদায়। সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, গদি হারাতে হয় শিনাবাত্রাকে। সেনা অভ্যুত্থান ঘটে দেশে। এই মুহূর্তে তাইল্যান্ডের শাসনভার জুন্টা সরকারের হাতে। প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন মিলিটারি জুন্টা নেতা প্রয়ুত-চান-ও-চা। একদা বিরোধী তথা গদিচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনাবাত্রার সমর্থক ‘তাই রক্ষা চার্ট পার্টি’-র পক্ষ থেকে শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের দলের হয়ে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়বেন রাজা মহা বাজিরালঙ্গকর্নের দিদি ৬৭ বছর বয়সি রাজকন্যা উবোলরত্না। আগামী ২৪ মার্চ ভোট।

তাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ১৯৩২ সালে। যদিও জনমানসে রাজপরিবারের প্রভাব যথেষ্টই। এত কাল সচেতন ভাবেই রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে এসেছে তাইল্যান্ডের রাজপরিবার। স্বাভাবিক ভাবেই, নজিরবিহীন এই ঘোষণায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে তাইল্যান্ডে। দেশের টালমাটাল রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতেই প্রথা ভেঙে এই সিদ্ধান্ত বলে জানান রাজকুমারী উবোলরত্না। যদিও এখনও স্পষ্ট নয়, উবোলরত্নার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পিছনে রাজপরিবারের সায় রয়েছে, নাকি গোটাটাই তাঁর একক সিদ্ধান্ত। ‘‘উবোলরত্নার ভোটে দাঁড়ানোয় উল্টেপাল্টে যেতে পারে তাইল্যান্ডের রাজনীতি,’’ বলছেন সে দেশের কূটনীতিবিদ তিতিনান পংসুধিরাক। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। আবার এখনকার থেকেও বেশি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে।’’

Advertisement

১৯৭২ সালে মার্কিন নাগরিক পিটার জেনসেনকে বিয়ে করার পরে রাজ-উপাধি ছেড়ে দিতে হয়েছিল উবোলরত্নাকে। এমআইটিতে পড়াশোনা করতে গিয়ে আলাপ হয় পিটারের সঙ্গে। সহপাঠী ছিলেন তিনি। বিয়ের পরে ২৬ বছর আমেরিকাতেই ছিলেন উবোলরত্না। ১৯৯৮ সালে বিয়ে ভেঙে যায়। ২০০১ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। রাজপরিবারের দায়িত্বভার ফের তুলে নেন নিজের কাঁধে। তবে রাজ-উপাধি আর পুরোপুরি ফেরত পাননি। ‘রানির মেয়ে’ হিসেবে সম্বোধন করা হত তাঁকে। বিয়ে ভাঙার ঝড় কাটতে না কাটতেই ২০০৪ সালে সুনামিতে হারান ছেলেকে। এর পর থেকে একাধিক প্রচারমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন তিনি। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদক-বিরোধী প্রচার চালান রাজকন্যা।

উবোলরত্নার দল ‘তাই রক্ষা চার্ট পার্টি’-র শীর্ষ নেতা প্রিচাপোল পঙ্গপানিচ বলেন, ‘‘আমাদের দলের একমাত্র প্রার্থী রাজকুমারীই। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনি যোগ্য দাবিদার। আমাদের বিশ্বাস, ওঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনও আইনি সমস্যা হবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’’ ‘পালঙ্গ প্রচারত পার্টি’র হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুত। বললেন, ‘‘নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি আমার লক্ষ্য নয়। দেশের ভালর জন্যই ফের ভোটে দাঁড়াচ্ছি।’’ তবে মূল প্রতিপক্ষ রাজকুমারী উবোলরত্নাকে নিয়ে নীরবই থেকেছেন প্রয়ুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন