Ballistic Missile

‘গুলি’ ছুড়তে পারত পৃথিবীর বাইরেও! মহাশূন্যে তাক করে আজও দাঁড়িয়ে পরিত্যক্ত সুপারগান

ছয়ের দশকের যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে এগিয়ে ইতিহাস তৈরি করার দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল এই বন্দুক।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৫৮
Share:
০১ ২০

দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট। ওজন ১০০ টন। সেকেন্ডে ২ হাজার মিটারেরও বেশি গতিতে ছুটে যেতে পারে এই বন্দুকের গুলি। পৌঁছে যেতে পারে ১৭৯ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় মহাশূন্যেও। ছয়ের দশকের যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে এগিয়ে ইতিহাস তৈরি করার দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল এই বন্দুক।

০২ ২০

কিন্তু শেষে নানা বাধায় জর্জরিত হয়ে অকালেই থমকে গেল তার দৌড়। ইতিহাস তৈরি করার বদলে নিজেই ইতিহাস হয়ে পড়ে রইল ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোজে।

Advertisement
০৩ ২০

আমেরিকা এবং কানাডার প্রতিরক্ষা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল এই বিশালাকার বন্দুক। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে পৌঁছনোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল এই বন্দুকটিকে। উদ্দেশ্য ছিল কম খরচে এর মাধ্যমেই পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্তিম উপগ্রহ পৌঁছে দেওয়া।

০৪ ২০

কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং বার্বাডোজের জঙ্গলে পরিত্যক্ত এই বন্দুকটি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। এই জঙ্গলেই বন্দুকটির পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল এক সময়। আজও মহাশূন্যের দিকেই তাক করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটি।

০৫ ২০

হার্প (হাই অলটিচিউড রিসার্চ প্রজেক্ট) নাম ছিল ওই প্রজেক্টটির। আর এই বিশালাকার বন্দুককে বলা হত সুপারগান। বিজ্ঞানী গেরাল্ড বুলের মাথা থেকেই বেরিয়েছিল এমন অভিনব পরিকল্পনা।

০৬ ২০

গেরাল্ড ছিলেন এক জন ব্যালিস্টিক ইঞ্জিনিয়ার। তিনি দ্রুত গতির বন্দুক প্রস্তুতকারক হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করার সময়ই তাঁর মাথায় এমন পরিকল্পনা আসে।

০৭ ২০

গেরাল্ড চেয়েছিলেন দ্রুতগতি সম্পন্ন এমন বন্দুক তৈরি করতে যা রকেটের মতো কাজ করবে এবং যাতে খরচও অনেক কম হবে। রকেট যেমন মহাশূন্যে উপগ্রহ পৌঁছে দেয়, এই বন্দুকই এ বার তা করবে। রকেট বানাতে যা খরচ, সুপারগান-এর ক্ষেত্রে খরচও কম হবে।

০৮ ২০

পাঁচের দশকের শেষের দিকে কানাডার প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরীক্ষাগারে সুপারগান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দেন তিনি। এই খবর দ্রুত পৌঁছে যায় আমেরিকার ব্যালিস্টিক পরীক্ষাকেন্দ্রে।

০৯ ২০

১৯৬১ সালে কানাডার প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরীক্ষাগার থেকে ইস্তফা দিয়ে গেরাল্ড ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। তখনও সুপারগান বানানোর স্বপ্ন মাথা থেকে যায়নি তাঁর। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা সেনাবাহিনী এবং কানাডার প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে অনুদান নিয়ে ফের শুরু করেন কাজ।

১০ ২০

১৯৬২ সালে বার্বাডোজে পরীক্ষাগার তৈরি হয়। এই পরীক্ষাগার মূলত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল।

১১ ২০

এই বন্দুকের ‘গুলি’ কত দূর যেতে পারে তা নিয়ে একের পর এক পরীক্ষা হয়েছিল। ক্ষেপণাস্ত্রের বদলে আসলে পৃথিবীর কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানোই উদ্দেশ্য ছিল এই বন্দুকের। ফলে একটু একটু করে যত ক্ষমতা বাড়ছিল অনেক বেশি উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলতে লাগল সুপারগান।

১২ ২০

অনুদানও ক্রমেই বাড়তে শুরু করল। প্রথম দিকে বছরে ১৫ লাখ ডলার অনুদান পেত। তার পর অনুদান বেড়ে হয় ৩০ লাখ ডলার।

১৩ ২০

ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য বন্দুকের আকারও বড় করা হয়। ১৯৬৫ সালে এর দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেওয়া হয় অনেকটাই। দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১২০ ফুট এবং ওজন ১০০ টন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্দুকের তকমা পায় সুপারগান।

১৪ ২০

এই পর্যায়ে এই বন্দুক আয়নোস্ফিয়ারের ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছে দেওয়া ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। তার পর ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয় সুপারগানের।

১৫ ২০

১৯৬৬ সালে ৮৪ কেজি ওজনের মার্টলেট ২ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সেকেন্ডে দুই হাজার একশো মিটার গতিবেগে ছুটতে শুরু করে এটি এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭৯ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাশূন্যে পৌঁছে যায়। এই আবিষ্কার সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।

১৬ ২০

লক্ষ্য ছোঁয়ার জন্য সুপারগানকে আরও শক্তিশালী করে তোলার তোড়জোড় চলছিল। পৃথিবীর কক্ষপথে উপগ্রহ পৌঁছে দেওয়া থেকে আর কয়েক পা পিছনে ছিল সুপারগান। কিন্তু সেই সময়ই নানা দিক থেকে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যায় এই প্রজেক্ট।

১৭ ২০

এই প্রজেক্ট নিয়ে অনেক সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল ইতিমধ্যেই। সমালোচনা এবং বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে ১৯৬৭ সাল নাগাদ প্রকল্প থেকে হাত সরিয়ে নেয় কানাডা প্রশাসন। কানাডা তত দিনে ৪৩ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়ে ফেলেছিল। আমেরিকা দিয়েছিল ৩৭ লাখ ডলার।

১৮ ২০

অনুদান দিতে গিয়ে সে সময় আমেরিকার উপরও আর্থিক চাপ পড়ছিল। কানাডা সমর্থন তুলে নেওয়ার পর আমেরিকা একার দায়িত্বে এই প্রকল্প চালাতে রাজি ছিল না। তাই তারাও অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

১৯ ২০

তখনও অবশ্য ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রকল্পে সাহায্য করছিল। কিন্তু কানাডা এবং আমেরিকা হাত তুলে নেওয়ার পর এই প্রকল্পের বিশাল ব্যয় বহন করা সম্ভব ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় এর কাজ।

২০ ২০

বার্বাডোজের সেই পরিত্যক্ত পরীক্ষাগারে আজও একই ভাবে মহাশূন্যের দিকে তাক করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সুপারগান হার্প মিসাইল। এক সময়ে গগনভেদী শব্দে মহাশূন্যে রওনা দেওয়া বন্দুক আজ নিশ্চুপ। ঝোপঝাড় ঘিরে ফেলেছে তার গোটা শরীরকে। রোদে-জলে মরচে পড়ে ভগ্নপ্রায় দশা তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement