Internationa News

পাকিস্তানের ডিগবাজি! জঙ্গি ডেরা নয় মাদ্রাসা, জইশ সদর কার্যালয়ের দখল নিয়েও ক্লিনচিট

পাকিস্তানেরই স্থানীয় এক সাংবাদিক ওই মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে অন্য ইঙ্গিত পেয়েছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, পুরোটাই কার্যত সাজানো। আগে থেকে পরিকল্পনা করে ছাত্র-শিক্ষকদের বুঝিয়ে বা হুমকি দিয়ে রাখা হয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:২৪
Share:

মাসুদ আজহারের ডেরার দখল নিয়েও ক্লিনচিট দিল পাকিস্তান। —ফাইল চিত্র

ফের প্রকাশ্যে চলে এল পাকিস্তানের দ্বিচারিতা। কার্যত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ডিগবাজি ইসলামাবাদের। বৃহস্পতিবার নিজেরাই জানিয়েছিল, জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের সদর দফতরের দখল নিয়েছে পাক প্রশাসন। আর শনিবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দেওয়া হল, দখল নেওয়া ওই মাদ্রাসা এবং মসজিদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনও সম্পর্কই নেই! মাসুদ আজহারের কোনও অস্তিত্ব নেই সেখানে। পাল্টা ভারতের ঘাড়েই দোষ চাপানোর চেষ্টা করে পাক তথ্যমন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরির দাবি, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে ধারণা প্রচার হয়েছে, তা গোটাটাই ‘ভারতের তৈরি করা’।

Advertisement

যদিও পাকিস্তানেরই স্থানীয় এক সাংবাদিক ওই মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে অন্য ইঙ্গিত পেয়েছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, পুরোটাই কার্যত সাজানো। আগে থেকে পরিকল্পনা করে ছাত্র-শিক্ষকদের বুঝিয়ে বা হুমকি দিয়ে রাখা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সন্ত্রাসের যোগ না থাকলে কেনই বা দখল নেওয়া হল, আর কেনই বা ক্লিনচিট দেওয়া হল। তবে কি গোটাটাই ইসলামাবাদের নাটক, লোকদেখানো?

বিতর্কের কেন্দ্রে পাক পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরের একটি মাদ্রাসা এবং একটি মসজিদ। মাদ্রাসাতুল সাবির নামে ওই মাদ্রাসায় রয়েছে প্রায় ৬০০ পড়ুয়া এবং ৭০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। তার কাছাকাছিই রয়েছে জামিয়া-ই-মসজিদ। মাদ্রাসার পড়ুয়া এবং স্থানীয়রা সেখানে নমাজ পাঠ করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছে, মাদ্রাসার আড়ালে আসলে এটিই জইশ-ই মহম্মদের ডেরা তথা সদর কার্যালয়। পঠনপাঠনের আড়ালে ওই মাদ্রাসা এবং মসজিদটি আদতে জইশের আঁতুরঘর। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়তে থাকায় ওই মাদ্রাসা মসজিদের দখল নেয় পাক প্রশাসন।

Advertisement

ভারত-পাক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞানভাণ্ডার ঝালিয়ে নিন

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরিএকটি ভিডিয়ো বার্তায় জানিয়েছিলেন, পাক পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরে মাদ্রাসাতুল সাবির ও জামিয়া-ই-মসজিদ-এর প্রশাসনিক দখল নিয়েছে পঞ্জাব প্রশাসন। তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ফওয়াদ জানিয়েছিলেন, জইশ-ই-মহম্মদের সদর কার্যালয়ের দখল নিয়েছে সরকার। আবার পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফেও বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কূটনৈতিক মহলের মনে হয়েছিল, অন্তত পুলওয়ামার পর পাকিস্তানের ঘুম ভেঙেছে, জঙ্গি দমনে এই প্রথম কোনও কড়া পদক্ষেপ করল পাক সরকার।

কিন্তু তার পর দু’দিন ও কাটল না। কিন্তু শনিবার ইসলামাবাদ কার্যত জানিয়ে দিল, ওই মদ্রাসা এবং মসজিদ আর পাঁচটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থানের মতোই। এর সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও যোগ নেই। শনিবার ওই দুই জায়গাতেই পাক সাংবাদিকদের নিয়ে যায় প্রশাসন। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থানের সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদের কোনও যোগ নেই। প্রায় ৬০০ ছাত্র রয়েছে এই মাদ্রাসায়। তাঁদের কেউই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। অন্য কোনও সন্ত্রাসী দলের সঙ্গেও তাঁদের যোগসূত্র মেলেনি।

আরও পড়ুন: ‘রুটিন’ অভিযান ঘিরে আতঙ্ক বাড়ছে কাশ্মীরে

আরও পডু়ন: ‘লড়াইটা কাশ্মীরের জন্য, কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নয়’, বার্তা মোদীর

কিন্তু প্রশাসনের এই দাবিকে কার্যত ‘ভুল’ প্রমাণ করেছেন সেদেশেরই এক সাংবাদিক। বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও পড়ুয়ার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তিনি মত প্রকাশ করেছেন, ‘‘জইশ-ই-মহম্মদ বা মাসুদ আজহারের কথা জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা এমন ভাব করেছেন, যেন জইশ বা মাসুদ আজহারের নামই শোনেননি। মনে হচ্ছে আমাদের যাওয়ার আগেই তাঁদের সব শিখিয়ে রাখা হয়েছিল।’’ ‘শিখিয়ে দেওয়া’র বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনৈতিক মহলও।

তাহলে কি পুরোটাই বিশ্ববাসীর কাছে ‘দেখানো’র চেষ্টা পাকিস্তানের? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা অন্তত সে দিকেই ইঙ্গিত করছেন। কেন? তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের হাত থাকার প্রমাণ কার্যত নিশ্চিত। মূল চক্রী যে জইশ প্রধান মাসুদ আজহার, সেটাও অস্পষ্ট নয়। আজহার পাকিস্তান থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তার পিছনে পাক সরকারের মদত রয়েছে, বিশ্ববাসীর কাছে সেটাও অজানা নয়। পুলওয়ামা হামলার পর তাই সারা বিশ্ব থেকেই জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের উপর চাপ বেড়েছে। সেই চাপ সামলাতেই কিছুটা নজর ঘোরানোর চেষ্টা ইসলামাবাদের। পাশাপাশি জঙ্গি দমনে পাকিস্তান যে ‘আন্তরিক’ সেটা জাহির করার প্রচেষ্টাতেই মাদ্রাসা-মসজিদের দখল নেওয়া হয়। আবার তাকে দরাজ সার্টিফিকেটও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে সক্রিয়তাও দেখানো হল, আবার মাসুদ আজহারকেও নিশ্চিন্ত করা গেল। অর্থাৎ কূটনৈতিক-সাপও মরল, আবার জইশ-লাঠিও ভাঙল না।

(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন