রানিমার হাতেই ভাঙল ভিক্টোরীয় রেকর্ড

পরনে সমুদ্র নীল পোশাক। মাথায় মানানসই ঘন নীল টুপি। সঙ্গে পছন্দের কালো হাতব্যাগ। আর ঠোঁটে সেই শিশুসুলভ হাসি। ওয়েভারলি স্টেশনে জড়ো হওয়া মানুষের দিকে তাকিয়ে যখন হাত নাড়লেন, গোটা চত্বর তখন ফেটে পড়ল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫২
Share:

রানিকাহিনি। বুধবার ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ছবি: এএফপি।

পরনে সমুদ্র নীল পোশাক। মাথায় মানানসই ঘন নীল টুপি। সঙ্গে পছন্দের কালো হাতব্যাগ। আর ঠোঁটে সেই শিশুসুলভ হাসি। ওয়েভারলি স্টেশনে জড়ো হওয়া মানুষের দিকে তাকিয়ে যখন হাত নাড়লেন, গোটা চত্বর তখন ফেটে পড়ল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।

Advertisement

৬৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন। সব চেয়ে বেশি সময়কাল ব্রিটেনের সিংহাসনে থেকে আজ ইতিহাস গড়লেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। বাবার মৃত্যুর পর ব্রিটেনের শাসনভার এসে পড়ল বছর পঁচিশের তরুণীর কাঁধে। কারণ তিনিই যে রাজ সিংহাসনের একমাত্র দাবিদার! মাঝে পেরিয়েছে ৬৩টা বছর। সে দিনের তরুণীই এখন নব্বইয়ের কোঠায়। এখনও সেই একই দায়িত্বে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। গণতন্ত্রের হাওয়ায় আজও দেশে রাজতন্ত্রের পতাকা উড়িয়ে রেখেছেন তিনি। রানি ভিক্টোরিয়ার ৬৩ বছর ৭ মাস ২ দিনের একটানা রাজত্বের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে ব্রিটেনের প্রবীণতম রানি হিসেবেও রেকর্ড গড়েছেন। আজ থেকে তিনিই হলেন ব্রিটেনের দীর্ঘতম শাসক।

Advertisement

আজকের দিনটা স্কটল্যান্ডের বালমোরালে সাদামাটা ভাবেই কাটানোর ইচ্ছে ছিল তাঁর। যদিও তাঁর সেই ইচ্ছে ধোপে টেকেনি। আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। রানিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বন্দুকের তোপধ্বনি করে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান পালন হয়েছে। রানিকে প্রথম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বলেছেন, ‘‘রানির রাজত্বকালকে স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গোটা দেশের শ্রদ্ধা-ভালবাসা জিতে নিয়েছেন তিনি। উনি আমাদের রানি এবং আমাদের গর্ব।’’

ওয়েভারলি স্টেশনের অনুষ্ঠানের পর ট্রেনে চেপে তিনি যান টুইডব্যাঙ্কে। সঙ্গে ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ এবং ফার্স্ট মিনিস্টার অব স্কটল্যান্ড (স্কটিশ মন্ত্রিসভার সভাপতিত্ব করেন) নিকোলা স্টারজিও। নিউটনগ্র্যাঞ্জে তিনি নামেন। ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান স্থানীয়রা। সেখানে নতুন একটি রেল স্টেশনের সূচনা করেন তিনি। গোটা অনুষ্ঠানটি বাকিংহাম প্যালেস থেকে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয় গণমাধ্যমকে।

ভিক্টোরিয়া ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ— ১২৫ বছরেরও বেশি সময় এই দুই নারীর হাতেই ছিল ব্রিটেনের শাসনভার। বিশেষজ্ঞদের মত, দ্বিতীয় এলিজাবেথের তুলনায় অনেক দক্ষ শাসক ছিলেন ভিক্টোরিয়া। সেই উচ্চতা ছুঁতে পারেননি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। অবশ্য দুই শাসকের সময়কালের মধ্যে ফারাকও রয়েছে বিস্তর। ক্রমেই বাড়তে থাকা গণতন্ত্রের স্রোতের মধ্যে রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা অটুট রাখার জন্য বর্তমান রানির কৃতিত্বও বড় কম নয়।

সাফল্যের পাশাপাশি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমলে বহু বিতর্কও আঘাত করেছে রাজ পরিবারকে। বিশেষত যুবরানি ডায়ানাকে নিয়ে একাধিক বিতর্ক রাজপরিবারের রক্ষণশীলতা ভেঙে তাঁকে সাধারণের বৈঠকখানায় টেনে এনেছে। তবে এ সব টানাপড়েন তেমন ছাপ ফেলেনি রাজ-গৌরবে। এখনও উইলিয়াম-কেটের সন্তানের নাম নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাজি ধরে লন্ডনের বুকিরা। রানির হীরকজয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানে উৎসব হয় দেশ জুড়ে। জনপ্রিয়তা তুঙ্গে না থাকলে এমনটা হতো না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন