ফলের আগেই জয় ঘোষণা এরডোয়ানের

পার্লামেন্টকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ বলেও আর কিছু নেই। গত বছরই বিতর্কিত গণভোটে এই সব সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়েছে তুরস্কে। এর পরেও ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরডোয়ান। ২০০৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আঙ্কারা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০৩:০০
Share:

জয়োল্লাস: আরও পাঁচ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদ নিশ্চিত। উচ্ছ্বাস এরডোয়ানের। সঙ্গে স্ত্রী। এএফপি

পার্লামেন্টকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ বলেও আর কিছু নেই। গত বছরই বিতর্কিত গণভোটে এই সব সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়েছে তুরস্কে। এর পরেও ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরডোয়ান। ২০০৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার পর থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট। অন্তত ১৫ বছর দেশ শাসন করে তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

পরাজিত বিরোধী প্রার্থী মুহারম ইনশে বলছেন, একনায়কের শাসনের বিপজ্জনক অধ্যায়ে ঢুকতে চলেছে তুরস্ক। দারুণ প্রচার এবং সভায় ভিড় হওয়া সত্ত্বেও ইনশে পেয়েছেন ৩১ শতাংশ ভোট। মজবুত অর্থনীতি আর স্বাস্থ্যে দারুণ পরিষেবা দিয়ে এরডোয়ান ক্ষমতায় ফিরেছেন। তবে ৬৪ বছর বয়সি এই শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ লম্বা— মতের মেরুকরণ, সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং অন্তত ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষকে জেলে পাঠানো। বস্তুত এ বারের ভোটও হয়েছে জরুরি অবস্থার মধ্যেই।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুভেচ্ছা-বার্তা এসেছে এরডোয়ানের কাছে। পশ্চিমী নেতারা অবশ্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেশ দেরিতে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর ‘অসাধারণ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং জনসমর্থনের ভিত্তি’-র প্রশংসা করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোথায় রয়েছে ছ’বছরের মেয়ে, জানা নেই বাবার

ক্ষমতায় ফিরে সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দ্রুত কাজ এগোবে। নতুন বলতে গত বছরের গণভোটের পরে প্রেসিডেন্টের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা যোগ করা হয়েছে সংবিধানে। যার মধ্যে রয়েছে, প্রেসিডেন্ট নিজেই ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের নিয়োগ করতে পারবেন, দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন, এবং প্রয়োজনে জরুরি অবস্থাও জারি করতে পারবেন। প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র ক্ষমতার এই নমুনা দেখে সমালোচকদের দাবি, ফ্রান্স বা আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের মতো এ দেশে শাসকের ক্ষমতায় কোনও ভারসাম্য আর নেই। তাঁরা বলছেন, তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তাফা কেমাল আতাতুর্কের পরে সব চেয়ে ক্ষমতাশালী নেতা এরডোয়ানই।

নয়া সংবিধান অনুযায়ী, এরডোয়ান চাইলে তৃতীয় দফাতেও (২০২৩ সালে) ফের লড়তে পারেন। যার অর্থ জয়লাভ করলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারেন তিনি।

বিরোধী এমপি সেলিন সায়েক বলছেন, ‘‘আমরা ফাসিস্ত শাসনে আছি। তবে ফাসিস্ত শাসক ৫৩ শতাংশ ভোট পায় না। ৯০ শতাংশ পায়। আশার কথা, এই ফলাফল থেকে বলা যায়, আধুনিক মূল্যবোধ এখনও আছে। সেটা বাড়তেও পারে।’’ বিরোধী প্রার্থী ইনশে-র দাবি, ঘোষণা থেকে ফলপ্রকাশ—নির্বাচনের পুরোটাই অস্বচ্ছ। তাঁর কথায়, ‘‘তুরস্কের জন্য ভয়ঙ্কর দিন। একনায়কের শাসন পুরোপুরি মেনে নিয়েছি আমরা।’’ বিভিন্ন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর অভিযোগ, সব চেয়ে বেশি জেলবন্দি সাংবাদিক রয়েছেন তুরস্কে। এত অভিযোগ থাকলেও জিতে এসে বিরোধীদের প্রতি এরডোয়ানের বার্তা, ‘‘আশা করি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ফলাফল নিয়ে কেউ আপত্তি তুলে গণতন্ত্রের ক্ষতি করবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন