ছক কষে এত ধর্ষণ!

সংখ্যায় কত? যাচাই করার কোনও উপায় রাখেনি আউং সান সুচির সরকার। রাখাইনে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ এখনও নিষিদ্ধ। ‘মেদস্যাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে’ (‘সীমান্তহীন চিকিৎসক’ নামে এক আন্তর্জাতিক সংগঠন) জানাচ্ছে, তারা ১১৩ জন ধর্ষিতার চিকিৎসা করেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ঢাকা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বয়স ১৩ থেকে ৩৫। এক জনের তো মাত্র ৯ বছর বয়স! মায়ানমারের সেনা রীতিমতো ছক কষেই এদের ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অত্যাচার, খুন শুধু নয় ধর্ষণকও তারা জাতিনিধনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

Advertisement

সংখ্যায় কত? যাচাই করার কোনও উপায় রাখেনি আউং সান সুচির সরকার। রাখাইনে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ এখনও নিষিদ্ধ। ‘মেদস্যাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে’ (‘সীমান্তহীন চিকিৎসক’ নামে এক আন্তর্জাতিক সংগঠন) জানাচ্ছে, তারা ১১৩ জন ধর্ষিতার চিকিৎসা করেছে। চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীদের বড় একটা অংশের ধারণা, আরও বিপদে পড়ার আশঙ্কায় নির্মম অভিজ্ঞতার কথা গোপন করে গিয়েছেন অনেকে। যাঁরা মুখ খুলেছেন, তাঁরাও নামের আদ্য অক্ষরের বেশি জানাতে নারাজ। এঁদের বয়ানগুলির মধ্যে সেনা-হামলার একটা সুনির্দিষ্ট ছক নজরে আসছে। উদ্দেশ্যটাও স্পষ্ট, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো। রাখাইন থেকে পালাতে বাধ্য করা।

ফতিমা (নাম পরিবর্তিত) যেমন জানিয়েছেন, সুর্য ডোবার কয়েক ঘণ্টা পরে চড়াও হয়েছিল সেনা। প্রথমেই স্বামীকে বেঁধে ফেলে। লুঠ করে তাঁর গয়না। পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এক জন এক জন করে ধর্ষণ করতে থাকে তাঁকে। বাধা দেওয়ার অবস্থাতেই ছিলেন না। ক’য়েক দিন আগে ফতিমা জেনেছেন তাঁর বাবা-মাকে খুন করেছে এই সেনা। সে রাতে ফতিমার স্বামীকে গুলি করে, গলার নলি কেটে খুন করে চলে যায় সেনারা। মাসখানেক আগে বিয়ে হয়েছিল ফতিমার। ওই রাতের পরে কী ভাবে যে এই শিবিরে এসে পৌঁছেছেন... এখনও গুছিয়ে বলে উঠতেও পারেন না।

Advertisement

সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্ট অবশ্য সাফ দাবি করছে, গত সেপ্টেম্বর-
অক্টোবরে এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি রাখাইনে। ফতিমার গর্ভে তবে কার সন্তান? বাংলাদেশে ত্রাণ শিবিরে তাঁর মতো অনেকেই তো সন্তানসম্ভবা! সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরও জবাব দিতে রাজি নয় মায়ানমার সেনা।

ত্রাণ শিবিরে রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটা তাই বাড়ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহী নন তাঁরা। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিন্তায় বাংলাদেশও। তাঁদের মায়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হলেও রয়েছে বহু জট। মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে শুধু ইচ্ছুকদেরই মায়ানমারে ফেরাতে পারবে ঢাকা। কিন্তু অনেকেই ইচ্ছুক নন ফিরতে। ফিরতে হলে মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে যে সব প্রমাণপত্র থাকা দরকার তা-ও নেই অনেকের কাছে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্টপুঞ্জের সাধারণ সভায় বাংলাদশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন আজ বলেন, ‘‘ঢাকা-ইয়াঙ্গন যোগাযোগ রেখে চলছে। কিন্তু শুধুই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সমস্যা মেটার নয়। আন্তর্জাতিক স্তরে জরুরি ভিত্তিতে এ নিয়ে পদক্ষেপ করাটা খুবই জরুরি।’’ রোহিঙ্গাদের মায়ানামারে ফেরানোর রাস্তা খুলতে শেখ হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও নজরদারির পক্ষে সওয়াল করছে প্রথম থেকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জে আজ ফের একই আবেদন জানালেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন