UN Security Council

যুদ্ধের মধ্যেই নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি রাশিয়া

নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫টি সদস্য দেশের প্রত্যেকে এক মাসের জন্য সভাপতিত্ব করে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা দায়িত্ব নেয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ বার রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করেছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

রাষ্ট্রপুঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৭
Share:

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রাশিয়ারই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। ফাইল ছবি।

ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গত এক বছরে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এ দেশের একাংশ। লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় দেশছাড়া। যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য বাসিন্দা। বেশ কিছু অঞ্চল ইতিমধ্যেই রাশিয়ার দখলে চলে গিয়েছে। এ সব সত্ত্বেও, এ মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হল রাশিয়া। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার কথায়, ১ এপ্রিল একটা ‘বাজে মশকরা’করা হল!

Advertisement

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্যতম রাশিয়া। স্থায়ী সদস্য হিসেবে গোটা বিশ্বে সামরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে তারা, কোনও দেশে শান্তিবাহিনী নিয়োগ করতে পারে, কোনও দেশ বা কোনও ব্যক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, যুদ্ধাপরাধের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠাতে পারে। অথচ ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রাশিয়ারই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। রাশিয়া আইসিসি-র সদস্য নয়। তাদের ঘোষণা, আইসিসি-কে তারা মানে না।

নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫টি সদস্য দেশের প্রত্যেকে এক মাসের জন্য সভাপতিত্ব করে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা দায়িত্ব নেয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ বার রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করেছিল। সে মাসেই তারা ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। এখনও সেই যুদ্ধ চলছে। সমালোচকদের প্রশ্ন, যে দেশের প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, সেই দেশ কী ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যতম শক্তিশালী অঙ্গের দায়িত্ব নিতে পারে? বিস্ময় প্রকাশ করে তাঁদের বক্তব্য, প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করছে রাশিয়া, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শুরুর পরিস্থিতি তৈরি করছে, একটানা পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে চলেছে, আর তারাই ক্ষমতায় আসছে!

Advertisement

ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা টুইট করেছেন, ‘‘রাশিয়ার ১ এপ্রিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব পাওয়া একটা বাজে মশকরা। রাশিয়া জোর করে অনৈতিক ভাবে ওই আসন দখল করেছে। ওরা ঔপনিবেশিক যুদ্ধ শুরুর পরিস্থিতি তৈরি করছে। শিশুদের অপহরণের জন্য ওদের নেতাকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করেছে আইসিসি।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃত্বে, এতে বিশ্ব কখনওই নিরাপদ হবে না।’’ হ্যাশট্যাগ-সহ তিনি লেখেন ‘ব্যাডরাশিয়ানজোক’, ‘ইনসিকিয়োরিটিকাউন্সিল’।

হোয়াইট হাউস প্রেস সচিব কেরিন জিন-পিয়ের সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকার ধারণা নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ওদের ক্ষমতা ব্যবহার করে যাবে। তাতে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোয় ওদের সুবিধা হবে।’’ সেটাই সত্যি হল। তবে রাশিয়ার সভাপতিত্ব নিয়ে আমেরিকা কোনও প্রকার বিরোধিতা করেনি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পাঁচ দেশ— আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন ও রাশিয়া। আমেরিকার বক্তব্য, এক জন স্থায়ী সদস্যকে সভাপতি হওয়া থেকে আটকানো যায় না। এ প্রসঙ্গে কুলেবা বলেন, ‘‘রাশিয়ার সভাপতিত্ব থেকে পরিষ্কার বিশ্বের নিরাপত্তা পরিকাঠামো একেবারেই ঠিক পথে চলছে না। যে দেশ পরিকল্পনামাফিক বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংস করছে, তারাই বিশ্বের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থার নেতৃত্ব দেবে।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জে মস্কোর দূত ভ্যাসিলি নেবেনজ়িয়া সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একাধিক বিতর্কসভার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আলোচনায় বসতে চায় রাশিয়া। আমেরিকার নাম না-করে নেবেনজ়িয়া বলেছেন, ‘‘একমেরু পৃথিবীর বদলে একটা সুসংহত ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী জরুরি।’’ এ নিয়েও আলোচনা চান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন