Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: অবস্থান পাল্টে মস্কো  বলল ‘দিশা দেখছি না’

ডনেৎস্ক অঞ্চলের সর্বত্র আজও দিনভর গোলাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী। লুহানস্কে এক দিনে ৩৫টি হামলা চলেছে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ০৪:৪৫
Share:

চেরনিহিভের গভর্নর দাবি করেছেন, সারা রাত এই শহরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার বাহিনী। ফাইল চিত্র।

কাল তুরস্কের শান্তি বৈঠকে কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখা গিয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন দু’পক্ষই জানিয়েছিল সে কথা। আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হওয়ায় পরবর্তীতে দু’দেশের প্রেসিডেন্টের বৈঠকে বসার কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এর পরের ২৪ ঘণ্টায় সেই পুরনো অবস্থানে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্র পোসকোভ আজ সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘‘কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না মস্কো।’’ ইউক্রেনে তাদের হামলা অব্যাহত। ডনেৎস্ক অঞ্চলের সর্বত্র আজও দিনভর গোলাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী। লুহানস্কে এক দিনে ৩৫টি হামলা চলেছে। আজ সকালে একটি জনবসতি অঞ্চলে হামলা চালায় রুশরা। এক বাসিন্দার মৃত্যুর খবর মিলেছে। বোমা পড়েছে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলেও।

Advertisement

গত কাল বৈঠকের শেষে মস্কোর তরফে জানানো হয়েছিল, রাজধানী কিভ-সহ উত্তর ইউক্রেনে তারা সামরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমিয়ে দেবে। রুশ উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলেকজ়ান্দার ফোমিন জানিয়েছিলেন, কিভ ও চেরনিহিভ থেকে সেনা সরানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেখানেও এ পর্যন্ত হামলা বন্ধের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। চেরনিহিভের গভর্নর দাবি করেছেন, কাল সারা রাত এই শহরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার বাহিনী। কিভ থেকেও সেই হামলার অভিঘাত টের পাওয়া গিয়েছে। থেকে-থেকে শোনা গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। একটি ব্রিটিশ দৈনিককে ফোনে চেরনিহিভের গভর্নর ভিয়ানচেসলাভ চোস বলেন, ‘‘এই যে এখন কথা বলছি, পিছনে গোলাবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। রাশিয়াকে আর বিশ্বাস হয় না। এখনও পর্যন্ত একবারও কথা দিয়ে কথা রাখেনি রুশ বাহিনী।’’ চোস জানিয়েছেন, চেরনিহিভ ও নিজ়িন শহরে মঙ্গলবার সারা রাত হামলা চলছে। আবাসনেও বোমা ফেলা হয়েছে। চেরনিহিভের বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বিশেষ করে কালকের রাত যেন ভয়াবহ ছিল। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি সারা রাত। বাঙ্কারে ঢুকে বসেছিলাম। কোনও যুদ্ধবিমানের আওয়াজ শুনিনি। কিন্তু ট্যাঙ্ক নিয়ে হামলা চলেছে। বোমা পড়েছে।’’

যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের দক্ষিণে বন্দর-শহর মারিয়ুপোল। বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান এই বন্দরের। তাই মারিয়ুপোলকে দখল করতে মরিয়া রুশ বাহিনী। মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন ইউক্রেনীয়রাও। এ সপ্তাহে মারিয়ুপোলে ঢুকে পড়েছে মস্কোর বাহিনী। কিছুটা অংশ দখলও করে নিয়েছে তারা। অভিযোগ, সাধারণ বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে পালাতে দিচ্ছে না রুশ বাহিনী। জল নেই, খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই। প্রচণ্ড ঠান্ডায় মৃতপ্রায় অবস্থায় বাঙ্কারের অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি আজ দাবি করেছেন, গোটা মারিয়ুপোল প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ম্যাক্সার নামের একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা কিছু উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে। তাতে স্পষ্ট মারিয়ুপোলের ধ্বংসের চেহারা। একাধিক বসতবাড়ি মাটিতে মিশে গিয়েছে। একের পর এক ট্যাঙ্ক লাইন দিয়ে ফায়ারিংয়ের জন্য প্রস্তুত। মারিয়ুপোলের মেয়র দাবি করেছেন, অন্তত ৫ হাজার বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন এই শহরে। ২১০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

মারিয়ুপোলে হামলা বন্ধের দাবিতে সরব ইউরোপ-আমেরিকা-রাষ্ট্রপুঞ্জ। শোনা যাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সেনা আত্মসমর্পণ করলে তবেই মারিয়ুপোলে হামলা বন্ধ করা হবে। ফ্রান্স ছাড়াও মারিয়ুপোল নিয়ে গ্রিস, তুরস্ক ও আরও কিছু দেশের সঙ্গে কথা হয়েছে পুতিনের। ‘ভেবে দেখা হবে’ জাতীয় আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে গত কাল বৈঠকে রাশিয়ার দেওয়া আশ্বাসে ভরসা নেই আমেরিকার। পেন্টাগন দাবি করেছে, কোনও সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয়নি। বরং কিভের চারপাশে নিজেদের সামরিক অবস্থান নতুন করে সাজাচ্ছে রুশ বাহিনী। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘আমরা নজর রাখছি। ওরা যা বলছে, সেটাই করে কি না দেখার। যত ক্ষণ দেখছি ওরা কী পদক্ষেপ করছে, কিছু বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন