ধ্বংসাবশেষে চলছে তদন্ত। ছবি: এপি।
মাঝ আকাশেই ঘটে অঘটন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাটিতে পড়ার আগেই টুকরো হয়ে গিয়েছিল মিশরে ভেঙে পড়া রুশ এয়ারবাস ৩২১। ঠিক কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়েছে তা এখনও জানাননি বিশেষজ্ঞেরা। তবে বিমানের ব্ল্যাকবক্স মেলায় সে তথ্যও শীঘ্রই জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কাল জঙ্গি সংগঠন আইএস দাবি করে, তাদের হামলাতেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এয়ারবাস ৩২১। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী শেরিফ ইসমাইল। বিশেষ়জ্ঞরাও জানিয়েছেন, রেডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে বিমানটি ৩১ হাজার ফুট উপরে ছিল। অত উঁচু থেকে বিমান নামিয়ে আনার মতো অস্ত্র জঙ্গি সংগঠনটির কাছে নেই।
আজ রাশিয়ার বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত কমিটির এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মাঝ আকাশেই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়।’’ ধ্বংসস্তূপের বেশ কিছুটা দূরেও মৃতদেহ মেলায় তল্লাশির পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে।
বিমানের যাত্রীদের কেউ প্রথম বার বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। কারোর বা প্রথম বিমান যাত্রা। কেউ আবার গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমায়। মিশরের রেড সি রিসর্টে ছুটি কাটাতে গিয়ে হাসিমুখে ছবি তুলেছিলেন তাঁরা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তা পোস্টও হয়ে গিয়েছিল। রবিরার সকাল থেকে মিশরের সরকারি টেলিভিশনে ঘুরে-ফিরে আসছে সেই ছবিই। সঙ্গে তাঁদের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহল থেকে আসা শোকবার্তা।
বিমান দুর্ঘটনায় মৃত ২২৪ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ক্রেমলিন-সহ রাশিয়ার একাধিক সরকারি দফতরে রবিবার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। মৃতদের অধিকাংশই সেন্ট পিটার্সবুর্গের বাসিন্দা। কাল মিশরের সৈকত শহর শর্ম এল-শেখ থেকে সেদিকেই যাচ্ছিল রুশ বিমানসংস্থা কোগালিমাভিয়ার এয়ারবাস ৩২১। আকাশে ওড়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে সিনাইয়ের কাছে হাসানা এলাকায় ভেঙে পড়ে বিমানটি। প্রাণ হারান বিমানের ২১৭ যাত্রী ও ৭ বিমানকর্মী। মৃতদের মধ্যে ছিল ১০ মাসের একটি শিশুও। রুশ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, যাত্রীদের ৩ জন ইউক্রেনের বাসিন্দা।
সেন্ট পিটার্সবুর্গের ভাইস গভর্নর জানান, প্রিয়জনের মৃতদেহ বিমানবন্দরে আসার আগে আত্মীয়দের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করছেন মনোবিদরা। শনিবারই বিমানসংস্থা কোগালিমাভিয়ার অফিসে তল্লাসি চালান রুশ তদন্তকারীরা। তার পরও রবিবার পরিষেবা চালু রাখে সংস্থাটি। তবে সিনাইয়ের উপর দিয়ে বিমান চলাচল বাতিল করেছে দুবাইয়ের এমিরেটস, এয়ার ফ্রান্স এবং জার্মানির লুফতহানসা। ফ্লাইদুবাই ও এয়ার আরবিয়াও বিমানের পথ ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ না জানা পর্যন্ত পুরনো রাস্তায় ফিরবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলি।
একটি সূত্রে খবর, ২০০১ সালের নভেম্বরেও মিশরে এক বার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল কোগালিমাভিয়ার একটি এয়ারবাস ৩২১। কায়রো বিমানবন্দরে নামার সময় লেজের অংশ রানওয়েতে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমানটি। ১৪ বছর আগের এই দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি বিমান সংস্থাটি।