একে ৪৭। বিখ্যাত এই বন্দুক তৈরি করেছিল রাশিয়ার কালাশনিকভ কোম্পানি। যুদ্ধকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল এই অস্ত্র। এ বার সুইসাইড ড্রোন তৈরি করতে চলেছে এই সংস্থা।
আবু ধাবির এক অস্ত্র প্রদর্শনীতে চলতি সপ্তাহে প্রথম এই আত্মঘাতী ড্রোন বা কেইউবি-র একটি ছোট সংস্করণ হাজির করেছে কালাশনিকভ গোষ্ঠী।দু’বছর অন্তর সেরা অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থাগুলি এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
‘অগ্রজ’ কালাশনিকভের মতোই ‘দক্ষ ও অল্প দামি’ কেইউবি-র যুদ্ধের ধরন বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই মারণ ড্রোনের নাম কালাশনিকভ ড্রোন বা কেইউবি-ইউএভি ড্রোন। সংস্থার দাবি, এই ড্রোন এর সমসাময়িক ড্রোনগুলির তুলনায় সস্তা। যুদ্ধকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে এই ড্রোন।
চার ফুট চওড়া এই ড্রোন ৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে ৩০ মিনিট উড়তে পারবে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক সঙ্গে নিয়ে।
একটা কফি টেবিলের আকারের এই ড্রোন লক্ষ্যবস্তুকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে নিক্ষেপ করতে সক্ষম। (প্রতীকী ছবি)
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও ‘ড্রোনস অ্যান্ড টেররিজম’ বইয়ের লেখক নিকোলাস গ্রসম্যানের মতে, ‘‘এই অস্ত্র হাতে পেলে বড় আধুনিক সামরিক বাহিনী ও ছোট মাপের বাহিনীর মধ্যে ফারাক মুছে যাবে।’’ এটি একেবারে নিখুঁত ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। যাকে ‘হাই ডিগ্রি অ্যাকিউরেসি’ বলছেন তিনি।
মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রের বদলে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের সেনাদের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড কালাশনিকভ কিনেছে পেন্টাগনও। প্রস্তুতকারক সংস্থা জানাচ্ছে, একে৪৭-এর মতোই কালাশনিকভ ড্রোন বা কেইউবি-ও নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ।
তবে সুইসাইড ড্রোন যে নতুন তা নয়। সিরিয়ায় মসুল ও রাকা দখলের সময়ে ইসলামিক স্টেট এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করেছিল। তবে তা ছিল অন্য ভাবে তৈরি। সাধারণ ড্রোনে বিস্ফোরক বেঁধে এই সুইসাইড ড্রোন তৈরি করেছিল আইএস জঙ্গিরা। সিরিয়াতে রুশ বাহিনীকে এই ধরনের ড্রোন দিয়েই আঘাত হেনেছিল ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা।
কম দাম, সহজসরল ব্যবহারের প্রক্রিয়া, সর্বোপরি তুখোড় দক্ষতার জন্য খুব দ্রুত বিশ্বের অস্ত্রবাজার দখল করে নিয়েছিল কালাশনিকভ। কখনও সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে, কখনও সরকারের হয়ে লড়তে এক কথায় বেছে নেওয়া হয়েছে একে৪৭। মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রের বদলে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের সেনাদের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড কালাশনিকভ কিনেছে পেন্টাগনও। প্রস্তুতকারক সংস্থা জানাচ্ছে, একে৪৭-এর মতোই কালাশনিকভ ড্রোন বা কেইউবি-ও নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ।
সংস্থার দাবি, জিপিএস যুক্ত নতুন এই কেইউবি ড্রোন হবে আরও দ্রুতগতিসম্পন্ন, নিখুঁত। প্রথম পর্যায়ের ড্রোনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিস্ফোরক বহনে সক্ষম এগুলি। তবে এই ড্রোন কারা কিনতে পারবে, কাদের কিনতে দেওয়া হবে, সেই ‘রাজনীতি’ নিয়েও ধন্দ রয়েছে। (প্রতীকী ছবি)
সন্ত্রাসবাদীদের হাতে এই ড্রোন-বোমা গেলে তা কতটা মারাত্মক, ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর উপরে হামলার জন্য এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার হয়, দাবি করেন তাঁরা । কিছু দিন আগে লন্ডন, ডাবলিন, নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরের আশপাশে সন্দেহজনক ভাবে ড্রোনের ঘোরাফেরা দেখে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দর। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, ড্রোনের সাহায্যে হামলার হুমকি রুখতে প্রস্তুত নয় পশ্চিমী সেনা।