(বাঁ দিক থেকে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সময়টা ভাল যাচ্ছে না আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। চেষ্টা করেও তিনি পূর্ব ইউরোপে শান্তি ফেরাতে পারছেন না। কাটছে না রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের জটিলতা। কিছু দিন আগে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। সেখান থেকে বেরিয়ে দাবি করেছিলেন, বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। আগামী দিনে ইউক্রেনের প্রেসি়ডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন পুতিন। কিন্তু সম্প্রতি রুশ বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ অন্য কথা বললেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কোনও বৈঠকের পরিকল্পনাই নেই। নিউ ইয়র্ক টাইম্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের দাবি নিয়ে এটাই এখনও পর্যন্ত ক্রেমলিনের সবচেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ়কে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী। সেখানেই তিনি দাবি করেছেন, পুতিন এবং জ়েলেনস্কির মধ্যে কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। কারণ যে কোনও বৈঠকের জন্য আগে প্রয়োজন ‘অ্যাজেন্ডা’ বা আলোচ্য বিষয়বস্তু। দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের তেমন কোনও বিষয়বস্তু এখনও খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তাই বৈঠক আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আলাস্কা থেকে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পুতিন এবং জ়েলেনস্কি মুখোমুখি বসবেন। প্রয়োজনে সেই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও উপস্থিত থাকতে পারেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর বল জ়েলেনস্কির কোর্টে ঠেলে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘‘এ বার সবটা প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির উপর নির্ভর করছে।’’ হোয়াইট হাউসে ফিরেই তিনি জ়েলেনস্কি এবং ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে আরও একটি বৈঠকে বসেন। যুদ্ধ থামানোর জন্য তিনি যে অনবরত চেষ্টা করে চলেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তবে তাতে কতটা লাভ হচ্ছে, লাভরভের বক্তব্যের পর তা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে তৈরি হল জটিলতা।
রুশ বিদেশমন্ত্রীর আরও একটি দাবি ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের যে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, রাশিয়াও তাতে যোগ দিতে চায়। ইউক্রেন বা ইউরোপের নেতারা এই সম্ভাবনাকে ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে ট্রাম্প নিজেও হতাশ। সম্প্রতি ওভাল অফিসে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে হতাশা গোপন করেননি তিনি। বলেছেন, ‘‘আমি এটা নিয়ে একেবারেই খুশি নই।’’ আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রধানদের আপাতত কিছুটা সময় দিতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এনবিসি নিউজ়ে পৃথক একটি সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স আবার দাবি করেছেন, রাশিয়ানেরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি থেকে সরে এসেছেন। যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা স্বীকার, নিরাপত্তার নিশ্চয়তার মতো বিষয় তার মধ্যে রয়েছে। ভান্সের কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই এখনও উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পূর্ণ সমঝোতা হয়নি। তা হলে তো যুদ্ধটাই আর হত না। কিন্তু আমরা কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এগোচ্ছি। ভরসা রাখছি।’’