NeoCov

Neocov: নিওকোভ কি চিনা বিজ্ঞানীদের ‘অতিরঞ্জন’

চিনা গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাদুড়ের দেহে মিলেছে নিওকোভ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

ফাইল চিত্র।

অতি-সংক্রামক স্ট্রেনের মতো গত দু’দিনে ছড়িয়ে পড়েছে একটি খবর— ভয়ানক মারণ-ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে হাজির করোনাভাইরাস গোষ্ঠীর নতুন ভাইরাস ‘নিওকোভ’। চিনা বিজ্ঞানীদের একটি দল তাদের গবেষণাপত্রে দাবি করেছে, এটি প্রতি তিন জন সংক্রমিতের মধ্যে এক জনের মৃত্যু ঘটাতে পারে। যদিও বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলের একাংশের মতে, গবেষণাপত্রে যা বলা হয়েছে, তার থেকে অনেকটাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।

Advertisement

রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির ডিরেক্টর অ্যালেকজ়ান্ডার গিন্টসবার্গের মতে, ভাইরাসের প্রতিনিয়ত রূপ পরিবর্তনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে নিওকোভের। তিনি বলেন, ‘‘মিউটেশন প্রতিনিয়ত ঘটছে। যে সমস্ত দেশে প্রতি মাসে এক লক্ষ বা তার বেশি সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে, সেখানে নতুন ভেরিয়েন্ট সব সময়েই ধরা পড়বে। কিন্তু সংখ্যাটা দু’-চার হাজার হলে কখনওই নতুন স্ট্রেন ধরা সম্ভব নয়।’’ গামালেয়া সেন্টারের বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরির প্রধান সের্গেই অ্যালকোভস্কির কথায়, ‘‘নিওকোভের আবিষ্কার একটি গুরুতর এবং চিত্তাকর্ষক বিষয়। কিন্তু তা কতটা ক্ষতিকর, সেটা এখনই আঁচ করা মুশকিল। ভাইরাসের এই ধরনের অজস্র প্রজাতি থাকে। গবেষণার আওতা বাড়ালেই তার হাল-হকিকত বোঝা সম্ভব।’’ একটি আলোচনাচক্রে এই মত প্রকাশ করেন তিনি।

চিনা গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাদুড়ের দেহে মিলেছে নিওকোভ। সামান্য কিছু মিউটেশন ঘটিয়ে এটি মানুষের দেহেও সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। ২০১২ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম’ (মার্স) নামে একটি রোগ দেখা দেয়। সেটির সঙ্গে এর মিল রয়েছে। চিনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিওকোভ বাদুড়ের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে যে রিসেপটরকে ব্যবহার করে, সেটির সঙ্গে মিল রয়েছে সার্স-কোভ-২ যে রিসেপটরের সাহায্যে মানবদেহে প্রবেশ করে, তার। এ ছাড়া কোনও মিল নেই। বাকিটা চিনা বিজ্ঞানীদের অনুমান ও আশঙ্কা।

Advertisement

এই অনুমান নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, প্রাণিদেহে অনেক সংক্রমণ ঘটে, সে সবই মানুষের দেহে ছড়ায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) শুধু জানিয়েছে, নিওকোভ নিয়ে কিছু বলার আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। ভারতীয় বিশেষজ্ঞ শশাঙ্ক জোশী টুইট করেছেন, ‘‘নিওকোভ পুরনো ভাইরাস। মার্সের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। নিওকোভ এসিই২ রিসেপটরের সাহায্যে বাদুড়ের দেহে ঢুকতে পারে, কিন্তু মানুষের দেহে সে এ ভাবে প্রবেশ করতে পারবে না, যত ক্ষণ না তার মিউটেশন ঘটছে। বাকি সবটাই উত্তেজনা ছড়ানো।’’

বিজ্ঞানী মহলের একাংশের মতে, যে হেতু মার্সের সঙ্গে মিল রয়েছে, তাই সেটির সঙ্গে তুলনা করে নিওকোভের মারণ ক্ষমতা অনুমান করা হয়েছে। তিন জন সংক্রমিতের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর আশঙ্কাও আনুমানিক। বরং গবেষণাপত্রে স্পষ্টই জানানো হয়েছে, পুরো গবেষণাটিই চলেছে ল্যাবে। এই মুহূর্তে মানুষের দেহে নিওকোভের প্রবেশের কোনও আশঙ্কা নেই। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সংযোগ যত বাড়বে, তত বেশি সংক্রমণ ঘটবে ভবিষ্যতে।

চিন্তার শেষ নেই ওমিক্রন ঘিরেও। ব্রিটেন জানিয়েছে, অন্তত ৪০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রনের বিএ.২ উপপ্রজাতি। এখনও পর্যন্ত বিশ্বে যত ওমিক্রনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ৯৯ শতাংশই বিএ.১ সাব-স্ট্রেন। এ ছাড়া বিএ.২ এবং বিএ.৩ নামে ওমিক্রনের আরও দু’টি উপপ্রজাতির খোঁজ মিলেছে। বিএ.২ নিয়ে উদ্বেগের প্রধান কারণ হল, এটিকে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাতেও ধরা যাচ্ছে না। অথচ ক্রমশ বিএ.১-কে সরিয়ে এটিই ওমিক্রনের মূল উপপ্রজাতি হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন