New Strain of Coronavirus

কোভিডের নয়া প্রজাতিকে কি রুখতে পারবে প্রতিষেধক? বাড়ছে উদ্বেগ

গত বছর চিনের উহানে যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বে যে অতিমারি পরিস্থিতি দেখা দেয়, গত কয়েক মাসে একাধিক বার তার চরিত্রবদল হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৫৩
Share:

নয়া করোনা নিয়ে উদ্বেগ গোটা বিশ্বে।

প্রতিষেধকের অপেক্ষায় দিন গুনছিল গোটা বিশ্ব। জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণ যদি বা শুরু হল, তাতে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াল নোভেল করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতি। এই নয়া করোনা আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি সংক্রামক বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিশ্বের তাবড় সংস্থাগুলির তৈরি প্রতিষেধক আদৌ এর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে কি না, তা-ই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সব দেশের।

Advertisement

ব্রিটেনে করোনার যে নয়া প্রজাতির সন্ধান মিলেছে সেটিকে ভিইউআই-২০২০১২/০১ বা বি.১.১.৭ বলা হচ্ছে। কী ভাবে এই নয়া প্রজাতির জন্ম হল, তা নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছে, যে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেরই চরিত্রবদল বা মিউটেশন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নয়া প্রজাতিগুলি ক্ষণস্থায়ী হলেও, দ্রুতগতিতে সেগুলির ছড়িয়ে পড়া এবং এর ফলে মূল ভাইরাসের চরিত্রবদল হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।

গত বছর চিনের উহানে যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বে যে অতিমারি পরিস্থিতি দেখা দেয়, গত কয়েক মাসে একাধিক বার তার চরিত্রবদল হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে কোভিডের প্রকোপে আমেরিকায় ১৫ হাজারের বেশি বেজির মৃত্যু হয়। তার জেরে সতর্কতামূলক ভাবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ বেজিকে হত্যা করে ডেনমার্ক। তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সে দেশের সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, বেজিদের শরীরে ভাইরাসটির যদি চরিত্রবদল হয়, তা থেকে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আবার কোভিড প্রতিষেধকও এর বিরুদ্ধে কার্যকর না-ও হতে পারে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নয়া করোনা স্ট্রেন নিয়ে আতঙ্ক, ব্রিটেনকে ‘একঘরে’ করল একাধিক দেশ​

সেইসময়ই ড্যানিশ প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ কারে মোলবাক করোনার নয়া প্রজাতি নিয়ে সতর্ক করেন। ডেনমার্কের স্টেট সিরাম ইনস্টিটিউটের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মোলবাক বলেন, ‘‘ডেনমার্কে নয়া অতিমারি দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। হতে পারে মিউটেশনের পর করোনার নয়া প্রজাতি মূল ভাইরাসের থেকে এতটাই আলাদা হল যে নতুন করে প্রতিষেধকের কাজ শুরু করতে হল আমাদের। এর প্রভাব গোটা বিশ্বের উপর পড়তে পারে।’’

মোলবাকের সেই আশঙ্কাই এ বার সত্যি প্রমাণিত হল। তবে করোনার এই চরিত্রবদল নতুন নয় বলে ইতিমধ্যেই দাবি উঠতে শুরু করেছে। কারণ অক্টোবরে ইউরোপে কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে করোনার একটি নয়া প্রজাতি ধরা পড়ে। ব্রিটেনে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করার পিছনেও সেটিই দায়ী ছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে সেটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো না গেলেও, ব্রিটেনে মাথাচাড়া দেওয়া করোনার নয়া প্রজাতি বি.১.১.৭-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের পর এ বার ইটালিতেও মিলল করোনার নতুন স্ট্রেন​

মূল ভাইরাসের তুলনায় করোনার নয়া প্রজাতি বি.১.১.৭-এ ২৩টি পরিবর্তন চোখে পড়েছে এখনও পর্যন্ত, যার অধিকাংশই ভাইরাসের হানায় তৈরি নতুন প্রোটিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মূল ভাইরাসের তুলনায় এর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ৭০ শতাংশ বেশি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট অথবা লন্ডনেই এই নয়া প্রজাতি হানা দেয়।

বি.১.১.৭ মূল ভাইরাসের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী কি না, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে বিশ্বের তাবড় সংস্থার তৈরি প্রতিষেধকগুলি এর বিরুদ্ধে আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, চরিত্রবদলের ফলে প্রতিষেধকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে বি.১.১.৭। তার জেরে টিকাকরণ প্রক্রিয়াও থমকে যেতে পারে। তবে করোনার নানা প্রজাতির কথা মাথায় রেখেই যেহেতু প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, তাই সাফল্যের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন