যুদ্ধ বদলে দিয়েছে মা-ছেলের ঠিকানা, ফের দেখা ৬৮ বছর পর

কম তো নয়, ৬৮ বছর পরে দেখা। ৪ বছরের ছেলে এখন বাহাত্তুরে বৃদ্ধ। পাক ধরেছে চুলে। কুঁচকেছে চামড়া। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন মা-ছেলে। বাঁধ ভাঙল চোখের জল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সোল শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৪২
Share:

পুনর্মিলন: শেষমেশ ছেলের মুখোমুখি লি। সোমবার। রয়টার্স

ছেলেকে দেখে চিৎকার করে উঠলেন ৯২ বছরের বৃদ্ধা। —‘‘স্যাং চোল!’’

Advertisement

কম তো নয়, ৬৮ বছর পরে দেখা। ৪ বছরের ছেলে এখন বাহাত্তুরে বৃদ্ধ। পাক ধরেছে চুলে। কুঁচকেছে চামড়া। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন মা-ছেলে। বাঁধ ভাঙল চোখের জল।

কোরীয় যুদ্ধে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল পরিবার। স্বামী-ছেলেকে নিয়ে দেশের অন্য প্রান্তে পাড়ি দিয়েছিলেন লি কেউম সেওম। মাঝপথে স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যান। মেয়েকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যান লি। ছেলেকে নিয়ে উত্তরেই থেকে যান স্বামী। এত বছর পরে ফের মুখোমুখি মা-ছেলে। লি এই প্রথম মুখ দেখলেন পুত্রবধূরও।

Advertisement

দু’দেশের মধ্যে অসামরিক ক্ষেত্রে একটি হোটেলে এমনই বহু আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হল আজ। রেডক্রস ও সরকারি সংবাদমাধ্যম কেবিএস-এর উদ্যোগে আজ মিলিত হয়েছিল কোরীয় যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ৮৯টি পরিবার। আবেদন জমা পড়েছিল ৫৭ হাজার। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জায়ে-ইন এবং উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন-এর ছাড়পত্রে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছেন একশোরও কম । বেশির ভাগই এখন আশির কোঠায়।

মায়ের জন্য বাবার একটি ছবি এনেছিলেন স্যাং চোল। বিচ্ছেদের পরে আর দেখা হয়নি দু’জনের। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ছেলের কাছেই ছিলেন লি-এর স্বামী। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘যুদ্ধে পরিবারের আর কেউ বাঁচেনি। রোজ প্রার্থনা করতাম, ছেলেটা যেন দীর্ঘজীবী হয়। ওকে একবার দেখার জন্যই বেঁচেছিলাম এত দিন।’’ দেখা করার আগে লি ভেবে পাচ্ছিলেন না, কী বলবেন ছেলেকে। কোথা থেকে শুরু করবেন আর কোথায় শেষ করবেন। ‘‘কত কথা জমে। সব তো বলাই হল না,’’ বলে চলেন বৃদ্ধা, ‘‘শেষে ওর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। পুরনো বাড়ির কথা...।’’

দু’দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যেন কথা না হয়। সীমান্তে পৌঁছনোর পরে সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তার পরে ওই হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কারও দেখা হল স্বামী, স্ত্রী-র সঙ্গে তো কেউ ছুঁতে পেলেন ভাইবোনকে। কে সাক্ষাৎ শেষে সবার এক সঙ্গে ছবি তোলা হয়।

আন সেউং চুন দাদার সঙ্গে দেখা করার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। আবেদন মঞ্জুর হল কিন্তু জানতে পারলেন দাদা আর নেই। কান্নাভেজা গলায় আন সেউং বলেন, ‘‘ভাইপোর সঙ্গে দেখা হল। অন্তত পরিবারের একটা সলতে তো বেঁচে! ’’

৫৭ হাজার আবেদনকারীর যাঁরা দেখা করার সুযোগ পাননি, তাঁদের অনেকে বিক্ষোভও দেখান আজ। বাবার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন কিম সেওং জিন-ই। বললেন, ‘‘বাবার বয়স হয়েছে। স্মৃতিভ্রম দেখা দিয়েছে। উনি একা চলে এসেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। গোটা পরিবার থেকে গিয়েছিল উত্তরেই। আর একটি বার কাছে পেতে চান পরিবারকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন