দূরত্বটা ১২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। সময় ছিল মাত্র দু’বছর। এই সময়ের মধ্যেই অন্তত সাত বার ওই বিপুল দূরত্ব মুছে ফেললেন দুই রাষ্ট্রনায়ক।
তাতেই অবশ্য শেষ নয়। এই দু’জন নিজেদের মধ্যে গত দু’বছরে কত বার ফোনালাপ করেছেন, তা গুণে বলা যাচ্ছে না। সরকারি সূত্রে শুধু বলা হচ্ছে ‘অসংখ্য বার’।
প্রথম জন নরেন্দ্র মোদী। দ্বিতীয় জন বারাক ওবামা। নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক থেকে ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউজের যে বিপুল দূরত্ব, তা ২০০০ সাল থেকেই কমতে শুরু করেছিল। ভৌগোলিক দূরত্ব যা-ই হোক উইলিয়াম জেফারসন ক্লিন্টন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর উদ্যোগে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যে নতুন যুগ শুরু হয়েছিল, ২০০৮ সালে তা অসামান্য মাইল ফলকে পৌঁছে যায় মনমোহন সিংহ এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের হাত ধরে। ভারত-আমেরিকা পরস্পরের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আবদ্ধ হয় সে বছর। ২০১৬ সালে পৌঁছে ভারত-মার্কিন ঘনিষ্ঠতা যেন আরও এক নতুন যুগে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আট বছরের শাসনকাল যখন শেষ লগ্নে, তখন সবে দু’বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া নরেন্দ্র মোদী ওয়াশিংটন পৌঁছচ্ছেন ওমাবার সঙ্গে বিদায়-বৈঠক করতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই শেষ বৈঠকের আগে মার্কিন সরকার বলছে, ‘‘২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যে অসংখ্য বার ফোনে কথা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ছ’বার বৈঠক হয়েছে।’’ সপ্তম বৈঠক আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক গোটা বিশ্বের সামনে খুব গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে ওবামা-মোদীর মধ্যে নিয়মিত কথোপকথনের বিষয়টি। ওবামা প্রশাসনের মন্তব্য, এত অল্প সময়ে এতগুলি বৈঠক এবং অগুনতি ফো কল প্রমাণ করছে প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারত-মার্কিন ‘স্বাভাবিক বন্ধুত্ব’কে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
মোদী আজ, সোমবারই জেনেভা থেকে রওনা হয়েছেন আমেরিকার উদ্দেশে। প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে তাঁর বৈঠক হবে। তার পর হোয়াইট হাউজেই মধ্যাহ্নভোজ। এর পর মোদীকে সঙ্গে নিয়ে ওবামা পৌঁছবেন মার্কিন কংগ্রেসে। আমেরিকার জাতীয় আইনসভার দুই কক্ষেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন, যা এক বিরল সম্মান।
আরও পড়ুন:
পৃথিবীতে চিন নামে দু’টি দেশ রয়েছে, জানেন কি?
মোদীর এই আমেরিকা সফর শুধু ওবামাকে বিদায় জানানোর জন্য নয়। তার সঙ্গে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে দু’দেশের মদ্যে। এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ঠিক কোন পথে এগনো হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম বা এমটিসিআর-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তি এই সফরেই হয়ে য়েতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তা যদি হয়, তা হেল অন্যান্য দেশকে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে এবং আমেরিকার কাছ থেকে প্রিডেটর ড্রোন কিনতে ভারতের সামনে আর কোনও বাধা থাকবে না। এমনকী মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদকরা ভারতে এসে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও বানাতে পারবে।
গত দু’বছরে ভারত এবং আমেরিকার এত দ্রুত কাছাকাছি আসা ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে চিন, পাকিস্তান সহ বেশ কয়েকটি দেশের কাছে। ছ’টি বৈঠক এবং অগুনতি ফোন কলের মাধ্যমে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যে বেনজির ঘনিষ্ঠতা এনেছেন মোদী-ওবামা, তা সম্ভবত ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছতে চলেছে মঙ্গলবার। এই বৈঠকের ফল যা হবে, তা আরও চাপে ফেলে দিতে পারে বারতের সব প্রতিপক্ষকে। বলছে ওয়াকিবহাল মহল।