প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে প্রহরায় শ্রীলঙ্কা সেনা। ছবি: রয়টার্স।
নির্ধারিত সময়ের দু’বছর আগেই শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। শুক্রবার মধ্যরাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৫ জানুয়ারি দেশ জুড়ে ফের নির্বাচনের ঘোষণাও করে দিয়েছেন তিনি। ১৭ জানুয়ারি বসবে পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন। যদিও এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার বিধি আছে বলে জানাচ্ছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংঘেকে বরখাস্ত করে নিজের পছন্দের মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর পর থেকেই শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক সঙ্কট। যা জারি ছিল গত দু’সপ্তাহ ধরে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন সঙ্গে থাকায় প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে নারাজ ছিলেন বিক্রমসিংঘে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থান থেকেই তাঁকে বের করতে পারেননি প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে বিক্রমসিংঘের সঙ্গে আছেন ১২০ জন সদস্য। অন্যদিকে দু’সপ্তাহ সময় পেয়েও নিজের পাশে মাত্র ১০৪ জন সদস্যকে পেয়েছেন রাজাপক্ষে।
হাল ছেড়ে দিয়ে শুক্রবার রাজাপক্ষে জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সদস্যের সমর্থন নেই। এর পরই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা করে দিলেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে বড় জুয়া খেলার রাস্তায় হাঁটলেন সিরিসেনা। তাঁর আশা, নতুন নির্বাচনে তাঁর পছন্দের প্রার্থীই ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
আরও পড়ুন: তালিবানের সঙ্গে বৈঠক, বিতর্কে মোদী সরকার
যদিও এখনও হাল ছাড়তে নারাজ বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংঘে। তাঁর দাবি, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বেআইনি, এই নির্দেশ কোনও ভাবেই কার্যকর করা যাবে না। প্রয়োজনে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে এই নির্দেশকে বেআইনি ঘোষণা করবেন। শ্রীলঙ্কার বামপন্থী দলগুলিও এই পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের ঢাল হল দিল্লি!
পার্লামেন্ট ভেঙে না দিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে শ্রীলঙ্কাকে চাপ দিচ্ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় শ্রীলঙ্কার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে, এমনটাই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চিনের মদতেই এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মৈত্রীপালা, এমনটাই ধারণা তাঁদের। কারণ, নবনিযুক্ত রাজাপক্ষে সরকারকে পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ স্বীকৃতি না দিলেও আগ বাড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিল বেজিং।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)