সুলিভান গুহা। ছবি: সংগৃহীত।
কেভ ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে ব্লুমিংটন থেকে ১০ মাইল দূরে সুলিভান গুহায় অভিযানে গিয়েছিলেন ইন্ডিয়ানা ইউনির্ভাসিটির ছাত্র লুকাস কাভার। গুহার ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় খেয়াল করেন দলের বাকি সদস্যরা আশপাশে কোথাও নেই। হন্তদন্ত হয়ে গুহার এ পাশ ও পাশ ছুটে যান, চিত্কার করে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু না, কোথাও কোনও সদস্যকেই দেখতে পাননি লুকাস।
আরও পড়ুন: ওরা আর বেশি দিন নেই, ট্রাম্পের পাল্টা উত্তর কোরিয়াকে
তখন বেলা পড়ে এসেছে। ফলে গুহার ভিতরটায় অন্ধকার যেন আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। বিশালাকায় গুহা, ঘুটঘুটে অন্ধকার, নিস্তব্ধতা— ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল লুকাসকে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিল তাঁর। কী ভাবে এই গুহা থেকে বেরোবেন ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। সঙ্গী বলতে তাঁর আইফোন। নেটওয়ার্কও কাজ করছিল না তাতে। ফলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করাও যে অসম্ভব! খাবারদাবারও সঙ্গে বিশেষ কিছু ছিল না। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাও বাড়তে থাকে। একটা সময় তাঁর মনে হয় এখানেই বুঝি সব শেষ। লুকাস জানান, রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধতা ভাঙছিল গুহায় থাকা বাদুরের ঝাঁক। ডানার ঝ়টপটানি, সেই সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আওয়াজে পরিবেশ যেন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। যাই হোক, প্রথম রাতটা আতঙ্কের মধ্যে কাটে। পর দিন ফের শুরু হয় গুহা থেকে লুকাসের বেরোনোর চেষ্টা। কিন্তু পথ খুঁজে না পেয়ে ফের আগের জায়গাতেই ফিরে যান। প্রথম রাতটা নিজের সঙ্গে থাকা খাবার দিয়ে কাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিন অবশেষ খাবারটুকুও না থাকায় গুহার স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল চাটতে শুরু করেন তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। আর খাবার বলতে ছিল পোকামাকড়। এ ভাবে দ্বিতীয় দিনও কেটে যায়। বেঁচে থাকার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই ভেবে আইফোনে নিজের পরিস্থিতি লিখে রাখতে শুরু করেন। একটা সময় ফোনও বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বাড়ির বাইরে রক্তাক্ত দেহ দেখে গৃহকর্তাকে অভিনন্দন জানাল পুলিশ!
এ দিকে ইউনিভার্সিটির ক্লাসে লুকাসকে না দেখতে পেয়ে তাঁর বন্ধু স্যাম নোরেল ক্যাম্পাস চত্বর ও আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোথাও তাঁর হদিশ মেলেনি। কেভ ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্যাম। তখনই ক্লাব সদস্যদের মনে সন্দেহ জাগে গুহার ভিতরে আটকে নেই তো লুকাস? তড়িঘড়ি গুহার দিকে রওনা দেন তাঁরা। গুহার ভিতরে ঢুকে খোঁজাখুঁজি করার পর এক জায়গায় অবসন্ন, প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হন লুকাস। বন্ধুকে জীবিত দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন বন্ধুরা। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কেভ ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। প্রায় ৬০ ঘণ্টা গুহার ভিতরে, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে কাটিয়েছেন সে কথা জানিয়েছেন লুকাস। আমেরিকার ইন্ডিয়ানোপোলিস-এর ব্লুমিংটনের ঘটনা।