moon

একাধিক দেশে অফিস, ক্রেতা আমেরিকার প্রেসিডেন্টরাও! ইনি চাঁদে জমি বিক্রি করেন, জমির দাম…

জমি কিনলেও তা চোখে দেখার সুযোগ কম। তাই দলিলের সঙ্গে ক্রেতাদের চাঁদের মানচিত্রও দেন হোপ। যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন কোন জায়গায় জমি কিনলেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ১৬:০৭
Share:
০১ ২৪

চাঁদের জমি বিক্রি করেন ডেনিস হোপ। প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ ডলার থেকে। ভারতীয় মূদ্রায় ১৮০০ টাকার আশপাশে।

০২ ২৪

জমির মালিকানা আইনত বৈধ। আছে দলিল। এমনকি মৌজা-পরচার মতো আইনি নথিও।

Advertisement
০৩ ২৪

জমি কিনলেও তা চোখে দেখার সুযোগ প্রায় নেই। তাই দলিলের সঙ্গে ক্রেতাদের একটি করে চাঁদের মানচিত্র দেন হোপ। যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন ঠিক কোন জায়গায় জমি কিনলেন।

০৪ ২৪

এ পর্যন্ত নাকি ৬০ লক্ষেরও বেশি ক্রেতাকে চাঁদের ৬১.১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছেন হোপ। তাঁর দাবি, চাঁদের জমির চাহিদা ভালই। এমন নাকি অনেকেই আছেন যাঁরা জমি কিনতে বার বার ফিরে আসেন তাঁর সংস্থায়।

০৫ ২৪

ক্রেতার ব্যাপারে কোনও বাছবিচার নেই এই হোপের। তারকা থেকে সাধারণ চাকুরিজীবী— সবাই রয়েছেন তাঁর ক্রেতার তালিকায়। তাঁর দাবি, ৬৭৫ জন নামী তারকা জমি কিনেছেন তাঁর কাছ থেকে। এঁদের মধ্যে নাকি রয়েছেন আমেরিকার তিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রেগনও।

০৬ ২৪

জমির দাম রাখা হয়েছে সাধারণের আয়ত্তের মধ্যেই। ২৪.৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয়ে হোপের বিক্রি করা একর প্রতি চাঁদের জমির দাম। শেষ ৫০০ ডলারেই। বেশি দামেরও জমি আছে। এক একটি মহাদেশের সমান সেই জমির দাম প্রায় ১৪ কোটি ডলারের কাছাকাছি। তবে জমি যেমনই হোক, একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন হোপ—সব জায়গা থেকেই পৃথিবীকে সমান ভাবে দেখা যাবে।

০৭ ২৪

হোপ জানিয়েছেন চাঁদের সবচেয়ে বৃহদাকৃতি জমির অংশটিতে ৫৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৭৪০ একর জায়গা আছে। যদিও সেই জমির ক্রেতা এখনও পাননি হোপ। বেশি চাহিদা ১৮০০-২০০০ একরের জমিগুলির। ম্যারিয়ট হিলটনের মতো বেশ কিছু হোটেলও জমি কিনেছে তাঁদের কাছ থেকে।

০৮ ২৪

হোপের সংস্থার নাম লুনার এমব্যাসি। যার বাংলা অর্থ চান্দ্র দূতাবাস। চাঁদে হোপের জায়গাজমির ‘দেখভাল’ করে এই সংস্থাটিই।

০৯ ২৪

হোপ নিজেই সংস্থার সিইও। যদিও এই সিইও-র অর্থ চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার নয়। সেলেশ্চিয়াল এগজিকিউটিভ অফিসার। মহাজাগতিক বিশেষ অধিকর্তা। তবে নিজেকে ‘চাঁদের মালিক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন হোপ।

১০ ২৪

চাঁদের জমির ব্যবসার বুদ্ধি এবং রসদ দুই-ই হোপ পেয়েছিলেন তাঁর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের দৌলতে।

১১ ২৪

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের আনা একটি প্রস্তাবের ফাঁক ফোকরই সাহায্য করেছিল হোপকে। ওই প্রস্তাবের মূল বিষয় ছিল সৌরজগতের মধ্যে থাকা মহাজাগতিক বস্তু। রাষ্ট্রপুঞ্জ বলেছিল, বিশ্বের কোনও দেশ বা কোনও দেশের সরকার সৌরজগতের কোনও মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না।

১২ ২৪

১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবক’টি দেশ সম্মতি দিয়েছিল। তবে ওই প্রস্তাবে কিছু অসম্পূর্ণতাও ছিল। মহাজাগতিক বস্তুর উপর সরকার বা দেশের অধিকার নিয়ে কথা বললেও এমনটা কোথাও বলা ছিল না যে কোনও ব্যক্তি এই দাবি করতে পারবেন না। হোপ ওই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়েই চাঁদের মালিকানা দাবি করেন।

১৩ ২৪

বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপুঞ্জকে একটি চিঠি লেখেন তিনি। আটের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে লেখা ওই চিঠিতে চাঁদের জমি এবং খনিজ সম্পদের মালিকানা দাবি করেন হোপ। সে চিঠির জবাব আজও আসেনি। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মৌনতাকে সম্মতি ধরে নিয়েই চাঁদের জমি বিক্রি করতে শুরু করেন হোপ।

১৪ ২৪

সেই থেকে শুরু। ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে গত ৪১ বছর ধরে বেশ রমরমিয়ে চলেছে হোপের চাঁদের জমির ব্যবসা।

১৫ ২৪

আট কিংবা ন’য়ের দশকে খাতা-পেন-খেলনার মতোই চাঁদের জমি বিক্রির বিজ্ঞাপনী পোস্টার পড়ত। ক্রেতারা আগ্রহ দেখালেও সে সময় লুনার এমব্যাসির কার্যকলাপকে সে ভাবে গুরুত্ব দেননি কেউ। কিন্তু এখন হোপের দাবি অনেককেই ভাবাচ্ছে।

১৬ ২৪

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়া বৈধ হতে পারে না। তার কারণ প্রশাসন বা সরকার ছাড়া কেউ জমি বিক্রি করতে পারে না।

১৭ ২৪

বিষয়টি জানার পরই অবশ্য দ্রুত পদক্ষেপ করেন হোপ। নিজস্ব সরকারই তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন গ্যালাকটিক ইনডিপেন্ডেন্ট গভর্নমেন্ট। হোপ সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট।

১৮ ২৪

২০০৯ সালে হোপের গ্যালাকটিক গভর্নমেন্ট আমেরিকার সরকারের মান্যতাও পায়। খোদ হিলারি ক্লিন্টন সই করেছিলেন গ্যালাটিক ইলডিপেন্ডেন্ট সরকারের স্বীকৃতি পত্রে।

১৯ ২৪

সরকার থাকলে সংবিধান লাগে, দরকার নিজস্ব মূদ্রা, পতাকা, প্রতীক-সহ আরও অনেক কিছু। হোপ সেই সবই বানিয়েছেন। তাঁর গ্যালাকটিক সরকারের নিজস্ব মূদ্রা রয়েছে। আছে নিজস্ব আইন-কানুনও।

২০ ২৪

এ ছাড়া লুনার এমব্যাসির নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা ছাড়াও জাপান এবং কোরিয়ায় রয়েছে কার্যালয়।

২১ ২৪

আমেরিকার পূর্ব উপকূলে নেভাদায় লুনার এমব্যাসির মূল কার্যালয়। সব মিলিয়ে ডজন খানেক কর্মী কাজ করেন সেখানে। জমির চাহিদার রকমফেরে কর্মীসংখ্যা বাড়ে-কমে।

২২ ২৪

৪১ বছরের ব্যবসায়ে এখন আর অবশ্য শুধু চাঁদে থেমে নেই হোপ। পৃথিবীর উপগ্রহ থেকে তাঁর ব্যবসা ছড়িয়েছে ভিন্‌গ্রহেও।

২৩ ২৪

একই আইনের ফাঁক গলে এখন বুধ, মঙ্গল, শুক্র, প্লুটো এমনকি বৃহস্পতির উপগ্রহ আইও-তেও জমি বিক্রি করছেন তাঁরা। হোপ জানিয়েছেন খুব শিগগিরি তাঁদের মহাজাগতিক জমির ব্যবসার পরিসর আরও বাড়বে।

২৪ ২৪

আপাতত হোপের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই। রাষ্ট্রপুঞ্জ। লুনার এমব্যাসির মহাজাগতিক অধিকারের চিঠির জবাব যদি শেষ পর্যন্ত তারা দিয়ে দেয় এবং তাদের দাবি খারিজ করে দেয় তবে ৬০ লক্ষ বিশ্ববাসীর চাঁদ ধরার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement