সমর্থনে: পার্লামেন্টের সামনে পোস্টার হাতে ব্রেক্সিটপন্থীরা। ছবি: এএফপি।
সকলেই আশা করছিলেন, ব্রেক্সিট-পন্থী এমপিদের পাশে পেতে আজ বিকল্প পরিকল্পনার কথা শোনাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। কিন্তু দেখা গেল, সে পথে আদপেই হাঁটলেন না প্রধানমন্ত্রী। সোমবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে সওয়াল করতে উঠে তিনি শুধু বললেন, আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া, ব্রেক্সিট-জট থেকে বার হওয়া সম্ভব নয়।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট প্রস্তাবটিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ এমপিরা। পার্লামেন্টে টেরেসার চুক্তির পক্ষে ভোট দেন মাত্র ২০২ জন এমপি। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ৪৩২টি। ব্রিটিশ সংসদীয় ইতিহাসে এত বড় হারের আর কোনও নজির নেই। তাঁর নিজের দল ও জোটসঙ্গী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি দলের শতাধিক এমপি-ও টেরেসার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। পরের দিন এক আস্থাভোটে কোনও ক্রমে নিজের গদি বাঁচান টেরেসা। তাঁকে বলা হয়, তিন কর্মদিবসের মধ্যে বিকল্প প্রস্তাব পেশ করতে হবে। কিন্তু আজ যে প্রস্তাব তিনি পেশ করেছেন তাতে শুধু জানানো হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর যে নাগরিক ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে রয়েছেন, ব্রেক্সিটের পরে ব্রিটেনে থাকতে তাঁকে ৬৫ পাউন্ড দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে না। এর থেকে বেশি কোনও ‘নতুন’ কথা আজ টেরেসার বক্তৃতায় ছিল না।
যেখানে আয়ারল্যান্ড সীমান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয় নিয়ে আটকে রয়েছে ব্রেক্সিট চুক্তি, সেখানে ৬৫ পাউন্ডের ছাড়ের প্রসঙ্গটি তোলায় হতবাক টেরেসারই দলের একাংশ। ব্রেক্সিটের বিরোধী যে লেবার পার্টি, সেই দলের এমপিরা যে তাঁকে সমর্থন করবেন না, তা জানেন টেরেসা নিজেও। ফলে সকলে ভাবছিলেন, তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হবে নিজের দলের ও ডিইউপি এমপিদের মন জয় করা। এবং সেই যুদ্ধে তিনি হাতিয়ার করবেন আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে এক নতুন প্রস্তাব। আগের ব্রেক্সিট প্রস্তাবে ব্রিটেনের অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং স্বাধীন রাষ্ট্র রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যা বলা হয়েছে, তাতেই আপত্তি জানিয়েছিলেন এমপি-রা। ১৯৯৯ সালের বেলফাস্ট চুক্তি অনুযায়ী, এখন এই দুই ভূখণ্ডের মধ্যে কোনও বেড়া নেই, এ-দিক থেকে ও-দিক যেতেও ব্রিটিশ বা আয়ারল্যান্ডের নাগরিকদের কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। বাণিজ্যের পথ একই রকম সুগম। কনজ়ারভেটিভ ও ডিইউপি এমপিরা চান, ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে আসার পরেও একই রকম সহজ থাকুক দুই ভূখণ্ডের মধ্যে যাতায়াত। অন্তত যত দিন রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের নতুন সীমান্ত চুক্তি তৈরি না হচ্ছে। আজ এ নিয়ে কোনও সবিস্তার আলোচনা না করে মে শুধু বলেন, ‘‘বেলফাস্ট চুক্তি ভাঙার কথা ভাবতেই পারি না।’’
গত সপ্তাহে আস্থাভোটে জেতার পরেই বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছিলেন টেরেসা। বিরোধী দলনেতা জেরেমি করবিন অবশ্য এখনও তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। করবিনের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শুধু নানাবিধ রাজনৈতিক চাল চেলে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ নাগরিকের কথা ভেবে কোনও পদক্ষেপই করছেন না। করবিন আলোচনার টেবিলে না এলেও লেবার পার্টির অন্যান্য নেতা-নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে মে-র। সেই সব কথাবার্তার কোনও প্রতিফলন টেরেসার আজকের বক্তৃতায় খুঁজে পাননি কেউই। লেবার দল বার বার দাবি তোলে, প্রধানমন্ত্রী অন্তত এ-টুকু আশ্বাস দিন যে, তিনি কোনও ভাবেই চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পথে হাঁটবেন না। তাতেও সম্মত হননি টেরেসা। উল্টে বিরোধীদের উপর চাপ বাড়িয়ে বলেছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট না চাইলে তাঁর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিই মেনে নিন বিরোধীরা।
২৯ মার্চ ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের। আজ টেরেসাকে বলা হয়, তা হলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিন প্রধানমন্ত্রী। টেরেসা জানান, সেই প্রস্তাব হয়তো মেনে নেবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে বেশ কিছু দিন আগেই ইউরোপীয় আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, ব্রেক্সিট কবে হবে, আদৌ হবে কি না, তা সম্পূর্ণ ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত। ইইউ-এর এ বিষয়ে কিছু বলার কোনও এক্তিয়ার নেই।
তা হলে কি ফের গণভোট? টেরেসার কথায়, ‘‘আবার গণভোট হলে তা প্রথম বারের সিদ্ধান্তকে অসম্মান জানানো হবে। এবং এমন একটা বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, এ দেশে গণভোটের কোনও মূল্য নেই। প্রথম গণভোট বাতিল করতে দ্বিতীয় গণভোট, তার পর কি দ্বিতীয় ভোট বাতিল করতে তৃতীয় বার গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে!’’