ইজ়রায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজ়ার চিত্র। ছবি: রয়টার্স।
গাজ়া উপত্যকার উপর ধারাবাহিক ভাবে ইজ়রায়েলি হামলার মাঝেই সোমবার শোনা গিয়েছিল, শান্তি আলোচনায় রাজি হয়েছে হামাস। অথচ এখনও সেই ‘যুদ্ধবিরতি’ প্রস্তাব নিয়ে হামাস এবং আমেরিকার মুখে ভিন্ন সুর। তার মাঝেই সোমবার থেকে এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলের লাগাতার হামলায় শুধু গাজ়াতেই ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বহু শিশুও।
সোমবার শোনা গিয়েছিল, আমেরিকার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছে হামাস। আমেরিকার বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নয়া প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে। সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়েছে বলেই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন এক প্যালেস্টাইন কর্তা। অথচ সংবাদমাধ্যম ‘আল জ়াজ়িরা’ জানিয়েছে, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ওয়াশিংটনে আমেরিকার কর্তাদের মুখে যা শোনা যাচ্ছে, আর এ বিষয়ে হামাস যা বলছে, দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। উইটকফেরই ঘনিষ্ঠ আমেরিকার এক কর্তা জানিয়েছেন, হামাসের এই দাবি ‘অসত্য’। দু’পক্ষের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও রকম আলোচনাও হয়নি। হামাসের সঙ্গে নয়, বরং ইজ়রায়েলের সঙ্গে সাময়িক সংঘর্ষবিরতি আলোচনায় যেতে চায় আমেরিকা। পরিবর্তে অর্ধেক যুদ্ধবন্দিকে প্রত্যর্পণ করতে হবে দুই পক্ষকেই। এই ভাবেই অদূর ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ সংক্রান্ত আলোচনার পথ খুলে যেতে পারে বলে বিশ্বাস হোয়াইট হাউসের। তবে এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অন্য দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়ায় ইজ়রায়েলি বোমা হামলায় এখনও পর্যন্ত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোররাতে ইজ়রায়েলের বিমানহানায় গাজ়ায় ৪৬ জন নিহত হন। আহত হন ৫৫ জনেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল গাজ়ার ফাহমি-আল-জারজাবি স্কুলে তৈরি করা একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। রাতের অন্ধকারে ইজ়রায়েলের হানায় ঘুমন্ত অবস্থাতেই মৃত্যু হয় সেখানে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের। নিহতদের মধ্যে একাধিক শিশুও ছিল। ওই স্কুলে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অলৌকিক ভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে সাত বছরের এক খুদে ওয়ার্দ শেখ খলিল! যদিও একই হামলায় মৃত্যু হয়েছে ওয়ার্দের মা এবং ছয় ভাইবোনের।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তার পর থেকেই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ফৌজ ধারাবাহিক ভাবে গাজ়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। শেষমেশ কাতারের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও মিশরের প্রচেষ্টায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল ইজ়রায়েল ও হামাস। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছিল। কিন্তু পণবন্দি মুক্তি ঘিরে টানাপড়েনের জেরে মার্চের গোড়ায় একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজ়ায় আবার হামলা শুরু করে ইজ়রায়েলি সেনা। তার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা চলছে। শুধু তা-ই নয়, খাদ্যসঙ্কটও দেখা দিয়েছে গাজ়ায়। হাজার হাজার মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাতে পারেন, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন রিপোর্টে। সেই আবহেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলছে জল্পনা।