সাতক্ষীরার গায়ে সোনাই নদী। ওপারে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুর। পারাপার রুখতে সীমান্ত রক্ষীরা তৎপর। দু’টি সীমান্ত অঞ্চল সামলাতে ব্যতিব্যস্ত নিরাপত্তা কর্মীরা। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে চোখ রাখা হয় যাতে সাতক্ষীরার লোক নদী পেরিয়ে হাকিমপুরে না ঢোকে। বাংলাদেশে ভোট হলেও সাতক্ষীরার ওপর চলে বিশেষ নজরদারি। এ বার ২২ মার্চ ইউপি’র প্রথম পর্বের নির্বাচনে সেটাই করা হয়েছিল। শেষ রক্ষা হল কই। ভোটের আগের দিন রাতেই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। ছাপ্পা ভোটে ব্যালট বাক্স ভর্তির প্রয়াস। ওরা ওরকমই। সুষ্ঠুভাবে ভোট হোক চায় না। তাদের উপদ্রবে ভোট উৎসব পণ্ড। দু’বছর আগেও মৌলবাদ, সন্ত্রাসের ডেরা ছিল সাতক্ষীরা। কঠিন অপারেশনে সেটা ভেঙেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুষ্কৃতীদের অবশিষ্ট এখনও পড়ে আছে।
২০টি জেলার নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৬০০-র বেশি। সংঘাত মূলত বিক্ষুব্ধদের আক্রোশে। আওয়ামি লিগ, বিএনপি’র টিকিট চেয়েও যারা পাননি, তাঁরা বাহুবলে দখলদারি চালিয়েছেন। ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন হিংসায়। তাঁদের অস্ত্রের অভাব হয়নি। পরিণতিতে ৬৫ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত। ৪৭ ইউপিতে ৪৯ প্রার্থীর ভোট বয়কট।
এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনায় অবশ্য মানুষ দমে যাননি। তাঁরা ভোট দিয়েছেন স্বতস্ফূর্তভাবে। কোনও কোনও জায়গায় ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি। পঞ্চগড়ে শতায়ু উত্তীর্ণ মেহেরন ভোট দিয়েছেন শান্তিতে। তাঁকে কোলে করে বুথে পৌঁছেছেন নাতবউ। বাড়ি থেকে বুথের দূরত্ব কম হওয়ায় ভোট দিতে কোথাও অসুবিধে হয়নি। এই দিনটির জন্য প্রতীক্ষায় ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। ভোটাধিকারের সুযোগ তারা ছাড়তে নারাজ। আশাপূরণে সন্তুষ্ট। সাধুবাদ জানিয়েছে হাসিনার পুলিশ প্রশাসনকে।
বাংলাদেশে সব নির্বাচনেই ভোটের দিনই ভোট গোনা হয়। ইউপি’র প্রথম দফার ভোটেও তাই হয়েছে। গুণতে গুণতে রাত পেরিয়েছে। তবু থামা নেই। প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটাররাও প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছেন। ফলাফল যা হওয়ার তাই। বিরোধীদের অনেক পিছনে ফেলে শীর্ষে আওয়ামি লিগ। মানুষের আস্থা যে এখনও তাদের ওপর সেটা প্রমাণিত। বিএনপি’র জয় থমকেছে নিজেদের ভুলে। ভোটের আগে তারা দলটা গোছাতে পারেনি। প্রার্থী নির্বাচনেও আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। মাটির কাছাকাছি থাকা নেতাদের টিকিট না নিয়ে ওপর থেকে প্রার্থী বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা গোঁজ প্রার্থী দিয়ে বিএনপি-র ভোট নষ্ট করেছে।
ইউপি ভোটের সবে শুরু। এখনও অনেক বাকি। এরপর ভোট হবে ৩১ মার্চ, ২৩ এপ্রিল, ৭ মে, ২৮ মে, ৪ জুন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ঝামেলার জায়গাগুলোতে প্রথমে ভোট হয়েছে। পরের ভোটে গোলমালের আশঙ্কা কম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে।
ইউপি নির্বাচন মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিকড়ের খোঁজ। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। গণতন্ত্রের পূর্ণ মুক্তি। নির্বাচনে কোন দল জিতল সেটা উল্লেখযোগ্য নয়। সব প্রতিকূলতা হঠিয়ে গণতন্ত্রের জয়টাই বড়। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের রাস্তা থেকে যে সরবে না, সেটা স্পষ্ট। এবার পরীক্ষা দ্বিতীয় পর্বের। আগামী বৃহস্পতিবার।