ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আদালতে ধাক্কা খেয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের নীতি। আদালত ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তকে ‘ক্ষমতা-বহির্ভূত’ বলে আখ্যা দেয় এবং শুল্কনীতি রদ করে দেয়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই নীতি আপাতত বহাল রাখার পক্ষে রায় দিল আমেরিকারই একটি আপিল আদালত। আপিল আদালতের এই রায়ে হোয়াইট হাউস খানিক স্বস্তি ফিরে পেল বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আদালতের রায়ের পরেই আপিল আদালতের দ্বারস্থ হয় ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের তরফে আদালতে আর্জি জানিয়ে বলা হয়, বাণিজ্য আদালতের রায়কে আপাতত রদ বা স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হোক। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই আর্জি মেনেছে আপিল আদালত। তবে আগামী ৫ জুনের মধ্যে মামলাকারীদের এবং ৯ জুনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে তাঁদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আপিল আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে সওয়াল করে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় আমদানি হওয়া পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে তা দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সওয়াল-জবাবের পর আপিল আদালত জানায়, আপাতত বাণিজ্য আদালতের রায় স্থগিত থাকছে।
গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের উপর ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, যে দেশ আমেরিকার পণ্যের উপর যত পরিমাণ শুল্ক চাপায়, ঠিক তত পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হবে সংশ্লিষ্ট দেশের রফতানি করা পণ্যে। আমেরিকায় রফতানি করা সমস্ত পণ্যে ১০ শতাংশ বনিয়াদি কর চাপানো হয়। তা ছাড়া যে দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে (যে দেশ আমেরিকায় বেশি পণ্য রফতানি করে, তুলনায় কম পণ্য আমদানি করে), সেই দেশের পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক চাপে। ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিল, এর ফলে আমেরিকার স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভারতের উপরেও চাপানো হয় ২৬ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। তার পর এই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।
বুধবার বাণিজ্য আদালতের রায়ের পর চাঙ্গা হয়েছিল আমেরিকার শেয়ার বাজার এবং মার্কিন ডলার। ভারতের মতো যে দেশগুলি আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির পথে হাঁটতে চলেছে, তারাও আদালতের রায়ে খানিক স্বস্তি পেয়েছিল। তবে বাণিজ্য আদালতের রায়ে তারা যে সন্তুষ্ট নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। আপিল আদালত, এমনকি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, দেশে জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা কী করে করতে হবে, তা অনির্বাচিত বিচারকেরা স্থির করে দিতে পারেন না। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র মারফত এ-ও জানা গিয়েছিল, বিকল্প উপায়ে শুল্ক আদায়ের পথ খোঁজা হচ্ছে।
আপিল আদালতের রায়ের পরেই ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আরও কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির পথে হাঁটতে চলেছে। তবে দেশগুলির নাম অবশ্য প্রকাশ্যে আনেনি হোয়াইট হাউস।