বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে সায় নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের। —ফাইল চিত্র।
বালোচ বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে যৌথ ভাবে প্রস্তাব এনেছিল চিন এবং পাকিস্তান। কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করল আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো দেশগুলি। অথচ গত অগস্টেই বিএলএ-কে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছিল আমেরিকা। বিএলএ-র সহযোগী ‘মজিদ ব্রিগেড’কেও জঙ্গিগোষ্ঠী হিসাবে তালিকাভুক্ত করে মার্কিন প্রশাসন।
রাষ্ট্রপুঞ্জে বিএলএ এবং তাদের আত্মঘাতী বাহিনী মজিদ ব্রিগেডের উপর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য আবেদন করেছিল চিন এবং পাকিস্তান। অভিযোগ তোলা হয় যে, এই দুই সংগঠন আল কায়দা, আইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি ইফতিকার আহমেদ দাবি করেন, বিএলএ এবং মজিদ ব্রিগেড আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা করছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক প্রতিনিধি বলেন, “পাকিস্তান এবং চিন যৌথ ভাবে বিএলএ এবং মজিদ ব্রিগেডের উপর বিধিনিষেধ আরোপের আর্জি জানাচ্ছে। আমাদের আশা, তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।”
যদিও আমেরিকার তরফে চিন-পাকিস্তানের যৌথ আবেদনের বিরোধিতা করে বলা হয়, বিএলএ যে আল কায়দার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, এমন জোরালো কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি যৌথ আবেদনের বিরোধিতা করায় আপাতত বিএলএ-র উপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ হচ্ছে না।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে ১২৬৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও সংগঠন আল কায়দা, তালিবান কিংবা আইএস-এর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে সেই সংগঠনের সদস্যেরা অন্য দেশে যেতে পারবেন না। তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এমনকি তাঁদের কাছে থাকা অস্ত্রশস্ত্রও বাজেয়াপ্ত করা হবে।
পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশে বালোচ বিদ্রোহীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পাকিস্তানি সেনা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে গত মার্চ মাসে। কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে হামলা হয় ওই সময়। পুরো ট্রেনেই কব্জা করে নেয় বালোচ বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিএলএ। ট্রেনে তখন ৪০০ জনের বেশি যাত্রী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পাক সেনাবাহিনীর কর্মীরাও। পরে অবশ্য পাক সেনাবাহিনীর অভিযানে বালোচ বিদ্রোহীমুক্ত হয় ট্রেন। নিহত হন ২১ জন সাধারণ মানুষ এবং চার জন সেনা। সেনা অভিযানে ৩৩ জন বিদ্রোহীরও প্রাণ যায়। বালোচিস্তানে চিনও পরিকাঠামো খাতে মোটা টাকা বিনিয়োগ করেছে। ওই প্রদেশে চিনের ‘অনুপ্রবেশ’কে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না বালোচ বিদ্রোহীরাও। এই আবহে বালোচ বিদ্রোহী সংগঠনের উপর বিধিনিষেধ আরোপে পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের যৌথ আবেদন জানানোকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।