(বাঁ দিকে) মেলানিয়া ট্রাম্পের সেই ‘বিতর্কিত’ ছবি। (ডান দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
নাম জেফ্রি এডওয়ার্ড এপস্টিন। ছিলেন আমেরিকার ধনকুবের। যদিও ধনী বলে তাঁকে কম মানুষই চেনেন। তাঁর খ্যাতি (বা কুখ্যাতি) যৌন অপরাধী হিসাবে। অন্তত ৪০ জন মহিলাকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত অধুনাপ্রয়াত সেই জেফ্রির নিজস্ব বিমানে নাকি আমেরিকার ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ‘ন্যুড ফোটোশুট’ করেছিলেন! ওই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আমেরিকার রাজনীতিতে বিতর্ক তুঙ্গে। সত্যিটা কী?
মেলানিয়ার যে ছবিটি নিয়ে বিভিন্ন কাহিনি ছড়িয়েছে, সেগুলো অর্ধসত্য। ছবিতে স্বল্পবসনা তন্বী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পত্নী এ কথা সত্যি। তবে তিনি ‘ন্যুড ফোটোশুট’ করেছিলেন জেফ্রির বিমানে নয়, ফোটোশুট হয়েছিল ট্রাম্পের নিজস্ব বিমানে। তবে এ সব ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বহু আগে। তখন মেলানিয়ার নামের সামনেও ‘ফার্স্ট লেডি’ সম্ভাষণ যোগ হয়নি। তাঁর পদবি ছিল নাউস। তিনি তখন উঠতি মডেল এবং ট্রাম্পের প্রেমিকা।
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল মেলানিয়ার অর্ধনগ্ন ছবি। তা নিয়ে বিরোধীদের দাবি, আমেরিকার ফার্স্ট লেডির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল যৌন অপরাধী জেফ্রির। সম্প্রতি এপস্টিন সংক্রান্ত সমস্ত অপ্রকাশিত ফাইল প্রকাশ্যে আনার দাবির প্রেক্ষিতে ঘৃতাহুতি করে এই দাবি। এপস্টিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-সহ বহু খ্যাতনামীর অন্তরঙ্গতা নিয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে ঝড় উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, এপস্টিনের বিমানে সত্যিই নগ্ন হয়ে ছবি তুলিয়েছিলেন স্লোভেনিয়ার প্রাক্তন মডেল মেলানিয়া?
জবাব, না। তবে ছবিটি এআই বা অন্য কোনও প্রযুক্তি দিয়ে বিকৃতও করা হয়নি। ভাইরাল হওয়া ছবিটি আসল। মেলানিয়ার ওই ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০০০ সালে। বিখ্যাত ম্যাগাজ়িন জিকিউ-এর জানুয়ারি সংস্করণে ছাপা হয়েছিল এই ‘ন্যুড’ ছবিটি। চিত্রগ্রাহক ছিলেন অ্যান্টোইন ভার্গলাস। ছবি তোলার জায়গা, ট্রাম্পের বোয়িং ৭২৭ বিমান। ২০০৬ সালের ৮ নভেম্বর ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের দিন জিকিউ আবার ওই ছবিটি প্রকাশ্যে আনে। দীর্ঘ ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘‘১৬ বছর আগে আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎকালীন বান্ধবী মেলানিয়া নাউসের প্রোফাইল তৈরি করেছিলাম। বর্তমান ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া প্রেসিডেন্টের কাস্টমাইজড বোয়িং ৭২৭ বিমানে ছিলেন। ফোটোশুটের জন্য তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়। পরনে ছিল হীরার খচিত অলঙ্কার এবং হাতে ক্রোম পিস্তল...।’’
এখন ছবি-বিতর্কে জিকিউ-এর সম্পাদক ডিলান জোন্সের মন্তব্য, ‘‘২০০০ সালের জানুয়ারিতে মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের ম্যাগাজ়িনের নগ্ন ছবি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এর কারণ হল, ২০১৬ সালের মার্চে আর্কাইভ থেকে বেশ কিছু ছবি আমরা অনলাইনে প্রকাশ করি। তার মধ্যে ওটি একটি।’’ তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘মেলানিয়া জিকিউ-তে কাজ করতে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও অনুরোধ করেছিলেন যে, ছবিগুলি তাঁর অফিসে পৌঁছে দেওয়া হোক। আমরা প্রচ্ছদ এবং কিছু প্রিন্ট ফ্রেম করে তাঁদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’’
ছবি-বিতর্কে ট্রাম্প-পত্নী মেলানিয়ার চাঁছাছোলা প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমায় প্রশ্ন করা হচ্ছে, কেন আমি আমার ‘ন্যুড মডেলিং’-এর জন্য গর্বিত। আসলে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, কেন ফ্যাশন ফোটোশুটে নিজের রূপের উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি?’’ আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’র সংযোজন, ‘‘আমরা কি আর মানবদেহের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারছি না? আমাদের ইতিহাস দেখুন। কত গুণী শিল্পী মানবশরীরকে কত আবেগ এবং উপলব্ধি দিয়ে গড়েছেন। সেগুলো বিশ্ব জুড়ে প্রশংসিত। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, নিজেদের শরীরকে সম্মান করা এবং শিল্পের আত্মপ্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের চিরন্তন ঐতিহ্যকে আলিঙ্গন করা।’’