রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ভারতের উপর শুল্ক চাপানো নিয়ে ফের মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতের উপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ফলে ‘বড় ধাক্কা’ খেয়েছে রাশিয়া। এমনটাই দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। আগামী শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে ট্রাম্পের। ওই বৈঠকের মধ্য দিয়ে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতা করতে চান তিনি। তার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়ার অবস্থা ভাল যাচ্ছে না। বিশেষ করে মস্কোর অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয় বলেই দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এর পরেই ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওদের (রাশিয়ার) থেকে সর্বাধিক বা দ্বিতীয় সর্বাধিক তেল কেনার দেশকে বলে দিয়েছেন, রাশিয়ার থেকে তেল কিনলে আমরা তাদের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপাচ্ছি। এটি একটি বড় ধাক্কা ছিল।” সোমবারের ওই মন্তব্যে সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। তবে ট্রাম্পের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রসঙ্গে ভারতের কথাই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন।
সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বার বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ভারতের উপর চড়া হারে শুল্কও যে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য চাপিয়েছেন, তা-ও গোপন রাখেননি তিনি। প্রথমে নয়াদিল্লির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক-কোপ বসান ভারতের উপর। বর্তমানে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখলে ভারতের সঙ্গে কোনও বাণিজ্যিক আলোচনা করবে না আমেরিকা, এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
যদিও নয়াদিল্লি এ বিষয়ে শুরু থেকেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছে, দেশের স্বার্থের সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা হবে না। ট্রাম্পের চাপানো শুল্ককে অন্যায্য এবং অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত এখন অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং কোনও ভাবেই মাথা নত করবে না। এক বিবৃতিতে আমেরিকার দ্বিচারিতার কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেখানে স্পষ্ট করা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে ভারতের উপর শুল্ক চাপাচ্ছে আমেরিকা। অথচ, রাশিয়া থেকে আমেরিকাও বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। ভারত জানিয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে আমেরিকা পারমাণবিক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম, বিবিধ সার এবং রাসায়নিক কেনে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের পরেও সেই আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকির পরে ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনও কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। বরং অগস্টের শুরুতেই সরকারি সূত্র মারফত জানা যায়, ট্রাম্পের চোখরাঙানির পরেও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে নয়াদিল্লি। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’-এর সাম্প্রতিক ওই প্রতিবেদনে নয়াদিল্লির সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, এখনই রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করছে না ভারত। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির মাঝে রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সেরে এসেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বর্তমান কূটনৈতিক টানাপড়েনের আবহে যা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বস্তুত, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প বার বার দাবি করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত থামাতে তিনিই মধ্যস্থতা করেছেন। এমনকি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটও দাবি করেছেন, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে গড়ে প্রতি এক মাসে একটি করে সংঘাত থামিয়েছেন ট্রাম্প। এর জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত বলে দাবি করেছে খোদ হোয়াইট হাউসই। তবে রুশ-ইউক্রেন সংঘাত এখনও থামাতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে আসছিলেন তিনি। এ অবস্থায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মস্কো-কিভ সংঘাত থামাতে আরও তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। অনেকের মতে, ভারতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপানোর নেপথ্যেও রয়েছে রাশিয়ার উপর চাপ তৈরির কৌশল।