Israel-Hamas Conflict

গাজ়ায় সব পণবন্দিকেই হামাস মুক্তি দিয়েছে! মানল ইজ়রায়েল, তবে পশ্চিম এশিয়া সফরে বন্ধু দেশেই বিক্ষোভের মুখে ট্রাম্প

ইজ়রায়েল সফরের শেষে সোমবারই মিশরের শার্ম আল-শেখে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে যান ট্রাম্প। সেখানে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে সই করেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:১২
Share:

(বাঁ দিকে) বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সোমবার ইজ়রায়েলের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘গাজ়ায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’’ তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দু’দফায় (প্রথমে সাত এবং তার পরে ১৩ জন) ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে মুক্তি দিল সশস্ত্র প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দিনের শেষে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার জানিয়ে দিয়েছে গাজ়ায় আর কোনও পণবন্দি নেই।

Advertisement

শান্তিপ্রস্তাবের শর্ত মেনে সোমবার শুরু বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে তেল আভিভও। ইজ়রায়েলের বিভিন্ন জেলে বন্দি ১৯০০-র বেশি প্যালেস্টাইনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের মুক্তি, পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, হাসি-কান্না-আবেগের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। গাজ়ায় নতুন করে বড় ধরনের কোনও সংঘর্ষও ঘটেনি সোমবার। পশ্চিম এশিয়া সফরের গো়ড়়ায় যা ট্রাম্পের কাছে ‘বড় প্রাপ্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে। ইজ়রায়েলের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে ট্রাম্প বলেন, “এটা হল অষ্টম যুদ্ধ (গাজ়ায় ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে সংঘাত), যা আমি থামালাম।” ঘটনাচক্রে, ইজ়রায়েল থেকেই সোমবার পশ্চিম এশিয়া সফরের সূচনা করেছেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহু সরকার তাঁকে বিপুল সংবর্ধনা দিলেও সে দেশের পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তৃতা করতে গিয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইজ়রায়েল সফরের শেষে সোমবারই মিশরের শার্ম আল-শেখে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে যান ট্রাম্প। সেখানে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে সই করেন তিনি। মিশরের প্রেসিডেন্ট ফলে আল-সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগান, কাতারের আমির শেখ তামিম-সহ অন্য বিশ্ব নেতারাও ওই নথিতে স্বাক্ষর করেন।

Advertisement

শর্ত মেনে পণবন্দিদের মুক্তি দিল হামাস

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি অনুসারে সোমবারের মধ্যে হামাসের হাতে বন্দি সব ইজ়রায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। যে সব বন্দি মারা গিয়েছেন, তাঁদের দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও ছিল চুক্তিতে। ইজ়রায়েল সরকার রবিবার জানিয়েছিল, তারা ৪৮ জন পণবন্দিকে ‘গ্রহণ করতে প্রস্তুত’। এই ৪৮ জনের মধ্যে ২০ জন বেঁচে আছেন বলে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বয়ং।

শর্ত মেনে সোমবার সকালে নিজেদের হেফাজতে থাকা সাত ইজ়রায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। গাজ়ার উত্তরাংশে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ওই সাত জনকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রেড ক্রস’-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে সময়ই হামাসের তরফে তাদের হেফাজতে থাকা ২০ জন জীবিত ইজ়রায়েলি পণবন্দির নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরে মুক্তি দেওয়া হয় আরও ১৩ জনকে। তেল আভিভে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে ‘জয়ধ্বনি’ দিতে শোনা গিয়েছে উল্লসিত জনতাকে। যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি ফেরানোর জন্য ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ইজ়রায়েলের বাসিন্দাদের একাংশ কুর্নিশ জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়, ট্রাম্প নিজে পণবন্দিদের মুক্তির দৃশ্য দেখেছেন। এর পরে ইজ়রায়েলও ধাপে ধাপে তাদের দেশে জেলবন্দি গাজ়া এবং আর এক প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বাসিন্দাদের মুক্তি দিতে শুরু করে।

ইজ়রায়েলের বিক্ষোভের মুখে ট্রাম্প

সোমবার বেলায় (ভারতের সময় অনুসারে) ইজ়রায়েলে পৌঁছোন ট্রাম্প। তাঁকে স্বাগত জানাতে সমুদ্রসৈকত জু়ড়ে বড় আকারের ‘ধন্যবাদ’ (থ্যাঙ্ক ইউ) লেখা হয়েছিল। বিমানবন্দরে ছিল বিপুল সংবর্ধনার আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পরে ইজ়রায়েলের পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এ যান ট্রাম্প। গাজ়ায় শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু এবং আইনসভার স্পিকার আমির ওহানা। বিশ্বে ট্রাম্পের মতো আরও বলিষ্ঠ নেতার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান ওহানা। ট্রাম্প নেসেটে উপস্থিত হতেই সব সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

কিন্তু এর পরে ট্রাম্প বক্তৃতা শুরু করতেই ‘তাল কেটে যায়’। আচমকা দুই পার্লামেন্ট সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেন তাঁরা। তবে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগে আয়মেন ওদেহ এবং ওফের কাসিফ নামেক ওই দুই বামপন্থী নেসেট সদস্যকে টেনেহিঁচড়ে ‘নেসেট’ থেকে বার করে দেওয়া হয়! পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেই আবার বক্তৃতা শুরু করেন ট্রাম্প। ‘নেসেট’-র নিরাপত্তারক্ষীদের ‘দক্ষতা’র প্রশংসা করেন তিনি। গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতি এবং বন্দিবিনিময়কে ‘ঐতিহাসিক ভোর’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, “এখন আকাশ শান্ত। বন্দুকের আওয়াজ থেমে গিয়েছে। পবিত্র ভূমিতে শান্তি এসেছে।” বিক্ষোভের ঘটনার জন্য ট্রাম্পের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা।

নোবেলের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ

ইজ়রায়েলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহু জানান, আগামী বছর যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন, সে কারণে গোটা বিশ্বে দৌত্য চালাবে ইজ়রায়েল। একই সঙ্গে ইজ়রায়েলের সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেন। শান্তিপ্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে সোনার পায়রা তুলে দেন নেতানিয়াহু। ইজ়রায়েলের আইনসভায় হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের আত্মীয় এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প। ইজ়রায়েল সফর শেষ করেই মিশরে গাজ়া সংক্রান্ত শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের।

তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না নেতানিয়াহু। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, ইহুদিদের উৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে ওই সম্মেলন এড়াচ্ছেন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত প্যালেস্টাইন স্বশাসিত কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট তথা হামাস বিরোধী সংগঠন ‘ফাতা’র প্রধান মেহমুদ আব্বাস ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন। প্রসঙ্গত, প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ওই কর্তৃপক্ষের সদর দফতর। গত শুক্রবার দুপুরে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর দেখা গিয়েছিল হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি তাঁদের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও রাত কাটিয়েছেন অনেকে। তবে নির্ভয়ে, শান্তিতে। সোমবার বিকেলে গাজ়ায় পৌঁছোন বহু প্যালেস্টাইনি। অনেকে আবার ফিরেছেন তাঁদের ঠিকানা ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement